ক্যামেরা হাতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করছেন আফ্রিকার তরুণ
আমব্রোস লেতোলুয়াই একাধিক প্রতিভার অধিকারী। তার ছাগলগুলোর কী প্রয়োজন, তিনি সেটা জানেন। ৩০ বছর বয়সি কেনিয়ার এই মানুষটি জীবজন্তুর প্রতিভাধর ফটোগ্রাফারও বটে। তিনি দেশের কেন্দ্রস্থলে নাইবুংগা সংরক্ষিত এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। এর আগে তিনি কলেজে ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেন্ট ও প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
প্রায় ১১,০০০ হেক্টর মাপের বিশাল এলাকা জুড়ে তিনি বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি বন্য প্রাণী নথিভুক্ত করছেন। কিন্তু শুধু ফটোই যথেষ্ট নয়। প্রাণী সুরক্ষার জন্য আশেপাশের এলাকার মানুষদেরও সামিল করে তাদের বিষয়টা বোঝানো জরুরি। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমব্রোস বলেন, ‘‘শুরুতে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুরা সাহায্য করেছে। এভাবে সবাই মিলে আমরা সমস্যার মোকাবিলা করতে পারছি। যেমন মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সংঘাত আমরা সমাজবদ্ধভাবে সমাধান করছি।’’
বিজ্ঞাপন
চিতাবাঘ বার বার এমন সংঘাতের কারণ হচ্ছে। আমব্রোস কিন্তু লেন্সের মাধ্যমে সহজে আর এই প্রাণীর দেখা পাচ্ছেন না। মূলত চোরাশিকার ও বাসভূমি সংকুচিত হয়ে ওঠার কারণে প্রাণীগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে চিতা লুপ্তপ্রায় প্রাণীর লাল তালিকায় স্থান পেয়েছে।
বিশেষ করে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার' নামে পরিচিত কালো চিতা সবচেয়ে বিপন্ন হয়ে উঠেছে। আমব্রোস এই প্রজাতির দশটি প্রাণী শনাক্ত করেছেন। সেগুলো জঙ্গল, উন্মুক্ত সাভানা ঘাসভূমি ও বুশল্যান্ডের ঝোপের মধ্যে বাস করে। আলোকচিত্রী হিসেবে তিনি এই প্রাণীগুলোকে সামগ্রিক ইকোসিস্টেমের নাজুক অবস্থার উদাহরণ হিসেবে গণ্য করেন।
বিজ্ঞাপন
আমব্রোস নিজেকে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখেন। স্থানীয় নারীরা অতীতে চিতাকে শত্রু হিসেবে দেখতেন। এখন সেই প্রাণীর সুরক্ষার জন্য তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন। তারা নিজেদের ‘চুই মামা' বা চিতার মা নামে ডাকেন। এই উদ্যোগের সহ প্রতিষ্ঠাতা এলি মডেস্টা বলেন, ‘‘এই প্রাণী রক্ষা করা কতটা জরুরি, আমরা তা বুঝেছি। কারণ চুই মামার প্রতিষ্ঠার অনেক সুফল পাওয়া গেছে।''
কারণ পর্যটকরা উপার্জনের পথ খুলে দিচ্ছেন। ফলে নারীদেরও উপকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা সাভানা বনভূমির মাঝে নিজস্ব এক ছোট সদর দফতর খুলেছেন।
একটি তথ্যকেন্দ্র আমব্রোস লেতোলুয়াইয়ের আরেকটি প্রকল্প। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সেখানে তিনি শিশুদের ক্যামেরার ব্যবহার শেখান এবং তাদের নিয়ে প্রাণিজগত ঘুরে দেখান। শিক্ষার প্যামফ্লেট ও দূরবিন নিয়ে সাফারি শুরু হয়। যেমন বিষয় হিসেবে ‘বার্ড ওয়াচিং' বেছে নেওয়া হয়েছিল। সাত থেকে ১৫ বছর বয়সি ছাত্রছাত্রীরা তাতে অংশ নিচ্ছে।
কোন কোন পাখি পর্যবেক্ষণ করা হলো, সাফারির শেষে তারা সবাই মিলে তার মূল্যায়ন করে। অনেকের জন্য সেটা ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা। ওয়াইল্ডলাইফ কিডস রিসোর্স সেন্টারের লতিপারি কিদিদিং বলে, ‘‘আমি বড় হয়ে রেঞ্জার হতে চাই, কারণ এখানে অনেক মানুষ প্রাণিজগত সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। আগে মানুষ অনেক প্রাণী হত্যা করেছে। কিন্তু কিছুদিন আগে আমি স্কুলে বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষা সম্পর্কে একটা বই পড়েছি। এখন আমি মানুষকে প্রাণীগুলোর গুরুত্ব শেখাতে এবং চোরাশিকার বন্ধ করতে চাই।''
আমব্রোস ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। তিনি লক্ষ্য করছেন, তরুণ প্রজন্ম পরিবেশ সম্পর্কে আরো সচেতন হয়ে উঠছে। পরিবেশের সৌন্দর্য ও নাজুকতা সম্পর্কে কীভাবে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব, নিজের ক্যামেরা সম্বল করে তিনি তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন।
এমজে