গণচিতায় জ্বলছে দিল্লি
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তা বর্ণনাতীত। সারা দেশের মতো রাজধানী নয়াদিল্লিতে মৃত্যুর সংখ্যা যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে মৃতদেহ দাহ করার কাঠ। মিলছে না সৎকারের লোকও। সোমবার (২৬ এপ্রিল) শহরের গাজিপুরের এক শ্মশানে দেখা গেল করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাহ করতে জ্বলছে গণচিতা। এ যেন পুরো ভারতেরই প্রতিচ্ছবি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দিল্লির বড় শ্মশানগুলোতে দীর্ঘ লাইনের পরেও মৃতদেহ দাহ করার সুযোগ না মেলায় বিভিন্ন স্থানে তৈরি করতে হচ্ছে ‘মেক-শিফট’ বা অস্থায়ী শ্মশান। ফাঁকা মাঠ, পার্ক, এমনকি গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে মৃতদেহ দাহ করার কাজ।
বিজ্ঞাপন
— Ajay Maken (@ajaymaken) April 26, 2021
মানুষকে ঘরে থাকতে এবং করোনা বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে টুইট করেছেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা অজয় মাকেন। টুইটে তিনি দিল্লির সুভাষ নগর শ্মশানের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে সারি সারি চিতায় জ্বলছে মরদেহ। আর অপেক্ষমান মরদেহের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
টুইটে মাকেন বলেন, ‘...প্রথমে হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য লম্বা লাইন, এরপর হাসপাতালের ভর্তির জন্য তার চেয়েও লম্বা লাইন। এখন তো শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করার জন্যও লাইন।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলছেন, আগে তাদের কাছে হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন বা প্লাজমা পেতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ আসতো। আগে তাদের কাছে কখনও কেউ যে অনুরোধ করেননি, এখন সেই অনুরোধও আসছে; আর তা হচ্ছে শ্মশানে অনেক বড় লাইন, দ্রুত মৃতদেহ সৎকার করিয়ে দিন।
পূর্ব দিল্লির বিজেপি নেতা ও স্থানীয় পৌরসভার সাবেক মেয়র পঙ্কজ লুথরার বক্তব্য, ‘করোনার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাইরাসটিতে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঘটনাও। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, শ্মশানে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। মৃতদেহ দাহ করার মতো কাঠও আর পাওয়া যাচ্ছে না।’
দিল্লির এনসিআর অঞ্চলের গাজিপুর শ্মশানের কাছে পার্কিং লটে চিতা জ্বালানো হচ্ছে। একই ঘটনা ঘটেছে সরাই কালে খান, ওয়াজিরাবাদ অঞ্চলে। একই ভাবে দিল্লির সীমাপুরি শ্মশান সংলগ্ন পার্কিংয়ের মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে মৃতদেহের দাহকার্যে।
পূর্ব দিল্লির মেয়র নির্মল জৈন বলছেন, ‘দৈনিক মৃতের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, সেই চাপ নিতে পারছে না শহরের শ্মশানগুলো। যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে তাই বিকল্প ববস্থা করতে হচ্ছে।’
একই পরিস্থিতি কবরস্থানেও। করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃতদেহ অনেক বেশি সংখ্যায় আসতে থাকলে আর কিছু দিন পরই কবর দেওয়ার জায়গা শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দিল্লির কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারীরা।
দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর সড়কের পেছনে কবরস্থানের কর্মী মোহাম্মদ নাসের বলছেন, ‘আগে দিনে দুই বা তিনটি মৃতদেহ আসত। এখন দিনে ২০ থেকে ২৫টি করে মৃতদেহ আসছে। শেষ কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এখানে আর কবর দেওয়ার মতো জায়গা নেই প্রায়।’
টিএম