ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৯৭টি লোকসভা আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা এবং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই আসনসংখ্যা আরও বাড়বে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের দুই নির্বাচনে যে ভরাডুবি ঘটেছিল কংগ্রেসের, এবারের নির্বাচনে সেই ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে কার্যত ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো এই সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল।

ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী এই রাজীনৈতিক দলটির পতন শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে। পরে সেই পতন আরও গতি পায় ২০১৯ সালের নির্বাচনে।

ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভার মোট আসনসংখ্যা ৫৪৩টি। কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায়, তাহলে অন্তত ২৭২টি আসনে জয়ী হতে হয়। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন জোট ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ)। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস একা জয়ী হয়েছিল ২০৬টি আসনে।

কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে ‘মোদি-ঝড়ে’ কার্যত উড়ে যায় কংগ্রেস। সেই নির্বাচনে মাত্র ৪৪টি আসনে জয় পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। পরে ২০১৯ সালের নির্বাচনে লোকসভায় ৮ আসন বাড়াতে সক্ষম হয় কংগ্রেস। সেবারের নির্বাচনে ৫২টি আসনে জয় পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থীরা।

দুই নির্বাচনেই কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রাহুল গান্ধী। দলের ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেসের নেতৃত্ব ও রাহুলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে প্রশ্নে মুখে ফেলে। তবে রাহুলের জন্য সবচেয়ের বড় বিপর্যয়কর ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৯ সালের নির্বাচনে। সেবার নিজের ‘পারিবারিক আসন’ বলে পরিচিত আমেঠিতে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী এবং সাবেক টিভি অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। কেরালার ওয়ানাড়েতে জয়ী হওয়ার সুবাদে সেবার কোনো রকমে লোকসভায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হন রাহুল।

মূলত ২০১৯ সালের নির্বাচনের ভরাডুবির দায় নিয়ে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল গান্ধী। তারপর প্রায় আড়াই বছর কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তার মা ও কংগ্রেসের সাবেক শীর্ষ নেত্রী সোনিয়া গান্ধী।

এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি হন মল্লিকার্জুন খাড়্গে।

সভাপতির পদ ছাড়ার পর দলকে সংগঠিত করতে আরও মনোযোগ দেন রাহুল। সারা দেশে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ২০২৩ সালে ‘ভারত-জোড়ো’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এই কর্মসূচির সময় ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে নেতা-কর্মীদের নিয়ে পায়ে হেঁটে লংমার্চ করেছেন রাহুল, অজস্র সভা-সমাবেশ করেছেন।

ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, রাহুল এবং কংগ্রেস হাইকমান্ডের ঐক্য ও টিমওয়ার্কের ফসল এবারের নির্বাচনের ফলাফল, যা মূলত কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। 

সূত্র : এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ