দিল্লিতে মর্মান্তিক ঘটনা
আইএএস হয়ে ঘরে ফিরবো বলেছিলেন, বাড়ি ফেরে নিথর দেহ
দিল্লিতে একটি ভবনের বেজমেন্টে আটকে পড়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় শোকে স্তব্ধ গোটা ভারত। মর্মান্তিক সেই ঘটনার দিন বেজমেন্টটি প্রায় ১০-১২ ফুট পানিতে ভরাট হয়ে যায়, যার ফলে নিহত শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে বের হওয়ার কোনও সুযোগ পাননি।
নিহত তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রেয়া যদব ও তানিয়া সোনি নামে দুই তরুণী রয়েছেন। শ্রেয়া উত্তর প্রদেশের আম্বেডকর নগরের বাসিন্দা। তানিয়ার বাড়ি বিহারের ঔরঙ্গাবাদে।
বিজ্ঞাপন
দুর্ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন নিহত দুই তরুণীর পরিবার। ছোট থেকেই আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তানিয়া। শ্রেয়া বাড়ির লোককে কথা দিয়েছিলেন, আইএএস হয়ে তবেই ঘরে ফিরবেন। কিন্তু বাড়ি ফেরে তার নিথর দেহ।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
গত শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, মধ্য দিল্লির ওল্ড রাজিন্দর নগরের সেই ভবনের বেজমেন্টে কোচিং সেন্টারের (রাউ’জ আইএএস কোচিং সেন্টার) লাইব্রেরি ছিল, যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য যেতেন।
ওল্ড রাজিন্দর নগরের সবচেয়ে কাছের আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্টে বলা হয়, বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে ৩১.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, যখন পানি বাড়তে শুরু করে, তখন শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। জরুরি টেলিফোন নম্বর ১১২-তে কল করা হয়েছিল, কিন্তু যানজটের কারণে উদ্ধারকারীদের সেখানে পৌঁছাতে দেরি হয়েছিল।
আম আদমি পার্টির রাজিন্দর নগরের বিধায়ক দুর্গেশ পাঠক বলেন, এক পর্যায়ে একটি ড্রেন ফেটে গিয়েছিল, যার কারণে এই সমস্যাটি ঘটেছে। পানি অপসারণের জন্য পাম্প বসানো হয়। ড্রেনটি শুধুমাত্র একটি জায়গায় ফেটে যাওয়ায় বিল্ডিংয়ের বেজমেন্ট ডুবে যায়।
বাড়িতে ফোন করেছিলেন শ্রেয়া
শ্রেয়ার মৃত্যুর খবরে হতবাক গোটা পরিবার। শ্রেয়ার মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ঘটনার একদিন আগে শ্রেয়ার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। মেয়ে মন খারাপ করে বলেছিল, তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছে। বাড়ির সবার খোঁজ খবর নিচ্ছিল। তারপর বলল, তোমরা চিন্তা করো না। স্বপ্ন সত্যি করে তোমাদের কাছে ফিরব।
আইএএস হওয়ার খবরের বদলে এলো মেয়ের মৃত্যু সংবাদ। শ্রেয়ার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মেয়ে আইএএস হতে গিয়েছিল, কিন্তু লাশ হয়ে ফিরছে, আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।
অপরদিকে তানিয়ার পরিবারের সদস্যরা বিস্ময়বিমূঢ়। কী করা উচিত বুঝতে পারছেন না এখনও। তানিয়ার বাবা বিজয় কুমার জানান, তিনি লখনৌ যাচ্ছিলেন। পথে মেয়ের মৃত্যুর খবর পান। সঙ্গে সঙ্গে নাগপুরে নেমে ফ্লাইটে দিল্লি আসেন।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বললেন, তানিয়ার মাত্র ২৫ বছর বয়স। কবিতা পড়তে খুব ভালবাসতেন। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল আইএএস হওয়ার। তাই ধ্যান জ্ঞান করেছিলেন ইউপিএসসি পরীক্ষাকে। তানিয়ার এক বোন বললেন, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছিল ওই। নাচ-গান-কবিতায় পারদর্শী ছিল, লেখাপড়াতেও ছিল তুখোর। কিন্তু এমন ঘটবে আমরা ভাবতেও পারছি না।
এমএসএ