ফিলিস্তিনের রকেটগুলো যেভাবে আকাশেই ধ্বংস করছে ইসরায়েল
একদিক থেকে ছুটে আসছে ফিলিস্তিনের ছোড়া রকেট, অন্যদিকে আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম থেকে ওই রকেট প্রতিহত করতে ছুটছে ইন্টারসেপ্টর
বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। তবে গত কয়েকবছরের মধ্যে এখন তা সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাসের চালানো রকেট হামলা ঠেকাতে ইসরায়েল যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তাতে ওই অঞ্চলের রাতের আকাশে ধরা পড়েছে অভূতপূর্ব কিছু চিত্র।
হামাস ও লড়াইরত অন্যান্য ফিলিস্তিনি যোদ্ধাগোষ্ঠী গত পাঁচ দিনে ইসরায়েলের দিকে ২ হাজারেরও বেশি রকেট ছুড়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুসারে, আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে ইসরায়েল এর ৯০ শতাংশই রুখে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মূলত স্বল্পমাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা পেতে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে ইসরায়েল।
২০০৬ সালে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছিল ইসরায়েল। মূলত ওই যুদ্ধের পরই আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের মতো একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির কাজে হাত দেয় দেশটি। ওই যুদ্ধেও হাজারো রকেট হামলা চালানো হয় ইসরায়েলে। তবে তখন তাদের হাতে এখনকার মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। বহু মানুষের প্রাণহানিও ঘটে।
বিজ্ঞাপন
আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করেছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস ও ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ। যুক্তরাষ্ট্রও অবশ্য এ প্রযুক্তির উদ্ভাবনে সহায়তা করেছে। ২০১১ সালে কাজ শুরু করে এই মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম।
এই মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। রাডার ব্যবহার করে সম্ভাব্য রকেট বা মিসাইল হামলার ইঙ্গিত পেলেই এটি কাজ শুরু করে তা কতটা ক্ষতি করতে পারবে তা নিরুপণে। এরপর যদি দেখা যায় এটি বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারবে তাহলে আসন্ন বিপদ ধ্বংসের কাজ শুরু করে দেয় এটি।
যেকোনো আবহাওয়াতেই কাজ করতে সক্ষম এই মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম আসলে একটি ব্যয়বহুল প্রযুক্তি হলেও এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, এ খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে কারণ, এটি আগে বের করে ফেলতে পারে হামলার উদ্দেশ্যে চালানো রকেট বা মিসাইলটি কোথায় আঘাত করবে। হামলা চালানো যে রকেট লোকালয়ে পড়তে পারে বা বড় ক্ষতি করতে পারে শুধুমাত্র সেগেুলোই ধ্বংস করা হয় এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে।
আয়রন ডোম কাজ শুরুর ১০ বছর পেরিয়ে এসে ইসরায়েল এখন দেশজুড়ে ১০টি স্থানে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর প্রতিটিতে চারটি করে লঞ্চার রয়েছে, যেগুলো আকাশেই কোনো মিসাইল ধ্বংস করে দিতে ২০টি করে ইন্টারসেপ্টর ছুড়তে পারে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জনাথন কনরিকাস বলছেন, এই আয়রন ডোম সিস্টেম না থাকলে এই হামলায় আরও বহু ইসরায়েলি আহত ও নিহত হতেন। এটা আমাদের জন্য জীবন রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করছে।
তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, গাজা থেকে যে পরিমাণে রকেট হামলা চালানো হয়েছে তাতে ইঙ্গিত মিলছে যে, সেখানকার যোদ্ধাগোষ্ঠীগুলো মিসাইল ঠেকাতে আয়রন ডোমের সর্বোচ্চ যে ক্ষমতা, তার চেয়ে বেশি হামলা চালানোর চেষ্টা করছে।
এনএফ