ভারতে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই নারদা অর্থ কেলেঙ্কারির মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জামিন দিয়েছে আদালত। এই দুই মন্ত্রী ছাড়াও গ্রেফতার মমতার মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য মদন মিত্র এবং তৃণমূলের আরেক সাবেক মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও জামিন দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সকালের দিকে তৃণমূলের এই চার মন্ত্রী ও নেতা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর টানা ছয় ঘণ্টার ধর্নায় বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রেফতারের পরপরই কলকাতার সিবিআই কার্যালয় নিজাম প্যালেসে নেওয়া হয় মমতার দলের হেভিওয়েট এই নেতাদের। 

পরে তৃণমূলের এই চার নেতার বিরুদ্ধে অনলাইনে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিবিআই। বিকেলে সিবিআইয়ের ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি শুরু হলে অভিযুক্ত চার নেতাকে ১৪দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়। অন্যদিকে, আদালতে আসামিদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে তাদের জামিন দেওয়া হয়।

দেশটির দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, আসামি পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘এই গ্রেফতার বেআইনি। রাজ্যপাল চার্জশিট মেমো মঞ্জুর করতে পারেন না। এছাড়া রাজ্যে করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি জেলে থাকলে সেই উদ্যোগ ধাক্কা খাবে।

চারজনকে গ্রেফতারের এক ঘণ্টার মধ্যেই ১০ টা ৪৭মিনিটে নিজাম প্যালেসে উপস্থিত হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বেআইনিভাবে এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী।

কিন্তু সিবিআই কর্মকর্তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগে অপারগতা জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাকেও গ্রেফতার করুন, আমাকে গ্রেফতার না করা হলে নিজাম প্যালেস ছাড়বো না।’

তৃণমূল নেতা আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সবাই বিধানসভার সদস্য। দুর্নীতির মামলায় তাদের গ্রেফতার করতে হলে বিধানসভা স্পিকারের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। সিবিআই সেই অনুমতি নেয়নি।’

গত বছরের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও ফুটেজ ফাঁস করে দিল্লির নারদ নিউজ ডটকম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল।

নারদ নিউজ দাবি করে, তাদের হাতে রয়েছে এ-সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ। ১৪ মার্চ সেই ভিডিওটি কলকাতার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে ফাঁস করে বিজেপিও।

ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। এই স্টিং অপারেশনে যাদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ এসেছিল, তারা হলেন মুকুল রায় (সাবেক রেলমন্ত্রী-২০ লাখ টাকা), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েতমন্ত্রী-৫ লাখ), সুলতান আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), সৌগত রায় (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), কাকলি ঘোষ দস্তিদার (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (কলকাতার মেয়র-৪ লাখ), মদন মিত্র (সাবেক পরিবহনমন্ত্রী-৫ লাখ), ইকবাল আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), ফিরহাদ হাকিম (পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী-৫ লাখ) এবং মহম্মদ আহমেদ মির্জা (জেষ্ঠ্য পুলিশ কর্মকর্তা-৫ লাখ টাকা)।

এই তথ্য ফাঁসের পর তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় বলেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ এক বড় ষড়যন্ত্র। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির দায়িত্বে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং এই ভিডিও ফুটেজ ফাঁসের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন।

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিধানসভার তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও অবিলম্বে বিধানসভার নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছিলেন। সূর্যকান্ত মিশ্র আরও অভিযোগ করেছিলেন, মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

নারদকাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন—মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী বর্তমানে বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ নেতা। মুকুল রায় বর্তমানে সর্বভারতীয় বিজেপির সহসভাপতি এবং শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা।

এসএস