নেতানিয়াহু বললেন হামলা চলবে, অবসানের সময় সীমা নেই
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলা চলবে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে না আসা পর্যন্ত এই হামলা অব্যাহত থাকবে। তবে প্রায় ১০ দিন ধরে চলমান এই সংঘাত যে আরও বাড়বে না তার নিশ্চয়তা এখনই দেওয়া যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ৩০ মিনিটের এক বৈঠকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সম্পর্কে এসব মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, আপনি হয় তাদের (হামাসের) বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারেন এবং এটি সবসময় একটি উন্মুক্ত সম্ভাবনা অথবা আপনি তাদের তছনছ করে দিতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
বুধবার ইসরায়েল বলেছে, গাজার সঙ্গে সংঘাতের অবসানে কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করেনি ইসরায়েল। নতুন করে হামাসের আন্তঃসীমান্ত রকেট হামলা ঠেকাতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা বৃদ্ধি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের ১০ দিনের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া এই হামলায় গাজার সড়ক-মহাসড়ক, সরকারি-বেসরকারি ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস এবং গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
তবে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। হামাসের টানা রকেট বর্ষণে ইসরায়েলজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেক ইসরায়েলি হামাসের রকেট থেকে বাঁচতে আশ্রয় শিবিরে পালিয়েছেন। আঞ্চলিক এবং যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি কূটনীতিকরা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন অস্ত্রবিরতির উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলে নিযুক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বক্তৃতার সময় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের সঙ্গে লড়াই থামানোর বিষয়ে নির্দিষ্ট করে সময়সীমা উল্লেখ করেননি। তিনি বলেন, হামাসের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সংঘাত রোধে ইসরায়েল বর্তমানে বলপ্রয়োগ করে প্রতিরোধে নিয়োজিত আছে।
গাজায় এক সপ্তাহের বেশি সময়ের গোলাবর্ষণে হামাস কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে ইসরায়েলের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্টপওয়াচ নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই। আমরা গাজায় এই অভিযানে লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। আগের অভিযানগুলো দীর্ঘসময় ধরে চলেছিল। সুতরাং একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অর্ধ-শতাধিক বিমান থেকে গাজায় একযোগে মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ১২২টি বোমা ফেলেছে। এতে গাজা উপত্যকায় অনেক আবাসিক ভবন একেবারে মাটিতে মিশে গেছে। তবে ইসরায়েলে বলেছে, এই হামলায় গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের স্থাপনা ও সুরঙ্গে আঘাত হানা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে প্রায় ৫০টি রকেট ছোড়া হয়েছে। রাজধানী তেলআবিবের দক্ষিণের উপকূলীয় শহর আশদোদের কাছে প্রতিনিয়ত সাইরেন বেজে চলেছে। এই শহরটি সংঘাতের কেন্দ্রস্থল গাজা সীমান্তের কাছে অবস্থিত। হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলি কোনো হতাহত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। তবে এতে অনেক ইসরায়েলি বাস্ত্যুচুত হয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, গত ৯ মে থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে গাজায় জনবহুল গাজা উপত্যকায় প্রায় সাড়ে ৪০০ বাড়িঘর ধ্বংস অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ছয়টি হাসপাতাল, ৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বাস্ত্যুচুত হয়েছেন ৫২ হাজারের বেশি মানুষ।
সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি।
এসএস