গাজায় চলমান সংঘাতে ইসরায়েল ব্যর্থ: দাবি দেশটির গণমাধ্যমের
গাজায় চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করেছে দেশটির ইংরেজি ভাষার দৈনিক হারেৎজ। দৈনিকটির একাধিক নিবন্ধে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সব কৌশল এবারের সংঘাতে পুরোপুরি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
পত্রিকাটির সম্পাদক আলুফ বেন ‘এটিই ইসরায়েলের এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যর্থ এবং ভিত্তিহীন গাজা অভিযান’ শিরোনামের এক নিবন্ধে বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতা ও পরাজয়ের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত জরুরি। একইসঙ্গে সামরিক বাহিনীতে সংস্কার আনতে হবে। তিনি বলেছেন, গাজায় এবারের পরাজয়ই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এবং এই যুদ্ধের কোনো প্রয়োজনই ছিল না।
বিজ্ঞাপন
পত্রিকাটি লিখেছে, লেবাননের সঙ্গে দ্বিতীয় যুদ্ধ এবং গাজায় এর আগের যুদ্ধগুলোর চেয়ে এবারের যুদ্ধে পরাজয়ের স্বাদ বেশি তিক্ত।গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি ক্ষেত্রে দুর্বলতা, যুদ্ধ পরিচালনায় অদক্ষতা এবং মন্ত্রিসভার অক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তবে গাজা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে বলে ইসরায়েলি নেতারা যে প্রচারণা চালাচ্ছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন সম্পাদক আলুফ বেন। তিনি অবিলম্বে হামলা বন্ধ করে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ইসরায়েলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পত্রিকাটির আরও কয়েকটি নিবন্ধে একই দাবির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
এদিকে, বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলা চলবে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে না আসা পর্যন্ত এই হামলা অব্যাহত থাকবে। তবে প্রায় ১০ দিন ধরে চলমান এই সংঘাত যে আরও বাড়বে না তার নিশ্চয়তা এখনই দেওয়া যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ৩০ মিনিটের এক বৈঠকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সম্পর্কে এসব মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, আপনি হয় তাদের (হামাসের) বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারেন এবং এটি সবসময় একটি উন্মুক্ত সম্ভাবনা অথবা আপনি তাদের তছনছ করে দিতে পারেন।
অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা হামলার জবাবে ফের ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে লেবানন। বুধবার ইসরায়েলের ভেতরে অন্তত চারটি রকেট লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছে। গাজা থেকে অবিরাম রকেট বর্ষণের মাঝে লেবানন ইসরায়েলে এই রকেট হামলা চালানোয় হাজার হাজার ইসরায়েলির মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবানন থেকে রকেট ধেয়ে আসায় ইসরায়েলে সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রকেট ছোড়ায় বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে ইসরায়েলের গালিলি, হাইফা এবং কিরইয়াত মোজকিন শহরে উচ্চশব্দে সাইরেন বাজানো হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, লেবানন সীমান্তের দক্ষিণ দিক থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে চারটি রকেট ছোড়া হয়েছে। এরমধ্যে একটি আকাশে বাধা দেওয়ার পর ধ্বংস করা হয় এবং অন্যটি উন্মুক্ত স্থানে পড়ে। বাকি দু’টি সমুদ্রে পড়েছে। এই হামলার জবাবে লেবাননের বেশ কয়েকটি টার্গেটে আর্টিলারি গোলাবারুদ নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের ১০ দিনের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া এই হামলায় গাজার সড়ক-মহাসড়ক, সরকারি-বেসরকারি ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস এবং গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
তবে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। হামাসের টানা রকেট বর্ষণে ইসরায়েলজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেক ইসরায়েলি হামাসের রকেট থেকে বাঁচতে আশ্রয় শিবিরে পালিয়েছেন। আঞ্চলিক এবং যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি কূটনীতিকরা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন অস্ত্রবিরতির উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্র: জেরুজালেম পোস্ট, রয়টার্স।
এসএস