ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি বন্ধে দেশটির অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে যে দাবি উঠেছে, তাকে কার্যত পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।

তবে তিনি এ ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদনসাপেক্ষেই দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি করা হবে।

রোববার এবিসি নিউজকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ব্লিনকেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের আত্মরক্ষার প্রশ্নে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং এমন এক সময়ে তিনি তা করেছেন যখন দেশটিতে অব্যাহতভাবে রকেট হামলা চলছে।’

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গত ১৩ মে এক টুইট বার্তায় বাইডেন বলেছিলেন, ‘জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে অবশ্যই ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। এটা সত্যিই মেনে নেওয়া অসহ্য যে ইসরায়েলের নাগরিকরা প্রতি মুহূর্তে রকেট হামলার আতঙ্কে বসবাস করছে। এ কারণেই আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েল যা করছে, তাতে আমাদের প্রশাসনের সমর্থন আছে।’

রোববারে সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথারই প্রতিধ্বনি করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি সেখানে যে যুদ্ধ হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রও তাতে সাড়া দিয়েছে এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে কংগ্রেসের আপত্তির বিষয়ে সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হলে ব্লিনকেন বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন। এর উত্তরে আমি বলব, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রশ্নে যতখানি সংবেদনশীল, তেমনি দেশটিতে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে কংগ্রেসের মতামতেরও যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।’

‘কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি করা হবে। আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রশ্নে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আমরা চাই কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা থেকে শুরু করে এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যাপারগুলো সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হবে।’

হামাস ও ইসরায়েল সেনা বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দেন। কংগ্রেসের অধিকাংশ সদস্য তাতে সমর্থন দিলেও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) সদস্য আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও এই অস্ত্র বিক্রি বন্ধে একটি খসড়া আইন প্রস্তাব করেন প্রতিনিধি পরিষদ বৈঠকে।

খসড়া এই আইনটির বিষয়ে এক বিবৃতিতে ওকাসিও বলেন, যুগের পর যুগ যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। এই অস্ত্র দেওয়ার সময় ইসরায়েলকে জিজ্ঞেসও করা হচ্ছে না, তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যূনতম অধিকারকে সম্মান করে কি না। এসব করে যুক্তরাষ্ট্র অগুনতি মানুষের মৃত্যু ও উচ্ছেদে সরাসরি ভূমিকা রাখছে।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের অধিকাংশ সদস্য ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিলেও ওকাসিওর খসড়া আইনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য মার্ক পেকোন, রাশিদা তালেব, কোরি বুশ, বেটি ম্যাককালাম, আয়না প্রিসলি, ইলহান ওমর, পামেলা জয়পাল ও আন্ড্রে কার্সন। যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থি রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত বার্নি স্যান্ডার্সও ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন।

সম্প্রতি গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতকারদের (সেটলার) দখল দারিত্ব ও সেখান থেকে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের ঘটনায় গত কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলছিল জেরুজালেম ও গাজা ভূখণ্ডে। গত ৯ মে জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ চত্ত্বরে বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত।

দু’পক্ষই অনড় থাকায় সেই সংঘাত গড়ায় ১১ দিনের যুদ্ধে। অবশেষে গত শুক্রবার (২১ মে) যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, যুদ্ধে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৫০ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি।

অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলে ১২ জন নিহত হয়েছেন।

সূত্র: আল জাজিরা

এসএমডব্লিউ