পাকিস্তানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা
পাকিস্তানের সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল উন্মত্ত জনতা। শুক্রবার দেশটির বন্দরনগরী করাচির সাদ্দার এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক উপাসনালয় ঘিরে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে হামলা চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে। করাচি পুলিশের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
করাচি পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাফদার বলেন, উন্মত্ত জনতা ওই ব্যক্তিকে ‘আহমদিয়া’ হিসাবে শনাক্ত করার পর পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ইট ছুড়ে হত্যা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এএফপিকে তিনি বলেন, উন্মত্ত জনতার মাঝে কয়েকটি ধর্মীয় দলের সদস্যরাও ছিলেন। পুলিশ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রায় ২৫ জন সদস্যকে নিরাপত্তার জন্য হেফাজতে নিয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির এক সাংবাদিক বলেছেন, পুলিশের গাড়িবহর আহমদিয়া পুরুষদের একটি প্রিজন ভ্যানে তুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। এ সময় সেখানে প্রায় ৬০০ মানুষ এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের সরকার আহমদিয়াদের ‘ধর্মদ্রোহী’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে এবং তাদের ওপর বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হুমকি এবং সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৫২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী আবদুল কাদির আশরাফি বলেন, আহমদিয়াদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ওপর চাপ তৈরি করার জন্য তিনি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা সেই উপাসনালয়টি বন্ধ করে দেওয়া এবং যারা সেখানে নামাজ আদায় করছিলেন তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিলাম। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের আহ্বান জানিয়েছি।
পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ধর্মীয় উগ্রবাদীদের একটি দলের আহমদিয়াদের ঐতিহাসিক উপাসনালয়ে পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত।’’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে সংস্থাটি বলেছে, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই চরম ব্যর্থতা আমাদের রাষ্ট্র নিজেই কীভাবে এই নিপীড়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে, সেটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কোটি কোটি অনুসারীর বসবাস রয়েছে। এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিজেদের মুসলিম মনে করলেও, ‘অন্য এক নবীর’ ওপর বিশ্বাস রাখার কারণে মূলধারার ইসলামি চিন্তাধারায় তাদের ‘অমুসলিম’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়া দেশটিতে ১৯৮৪ সালে পাস হওয়া একটি আইনে আহমদিয়াদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ইসলামি হিসেবে দাবি নিষিদ্ধ করা হয়।
একই সঙ্গে দেশটিতে নিজেদের উপাসনা স্থানগুলোকে মসজিদ হিসাবে উল্লেখ, আজান দেওয়া বা মক্কায় পবিত্র হজের তীর্থযাত্রায় ভ্রমণ করতে পারেন না আহমদিয়ারা।
এই সম্প্রদায়ের হিসেব অনুযায়ী, পাকিস্তানে ২০২৪ সালে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত ৬ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আর ১৯৮৪ সাল থেকে ২৮০ জনের বেশি আহমদিয়া সদস্য উন্মত্ত জনতার সহিংসতায় মারা গেছেন। একই সময়ে এই সম্প্রদায়ের ৪ হাজার ১০০ জন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৫ জনের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি (ধর্ম অবমাননা) আইনে মামলা হয়েছে—যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ইস্যু। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রায়ই দেশটিতে গণপিটুনি কিংবা দাঙ্গার ঘটনা ঘটে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস