ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা নয়, শান্তির পথে এগোতে চান নওয়াজ শরিফ
ভারতের সঙ্গে শান্তি ফেরাতে সব ধরনের কূটনৈতিক মাধ্যম ব্যবহারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে পরামর্শ দিয়েছেন তার বড় ভাই ও দেশটির তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তিনি চলমান উত্তেজনায় ভারতের বিরুদ্ধে যেকোনও ধরনের আগ্রাসী অবস্থানের বিপক্ষে বলেও শেহবাজ শরিফকে জানিয়ে দিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় লাহোরে দুই ভাইয়ের অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা নিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরিফ। নওয়াজকে তাদের পারিবারিক বাসভবন জাতি উমরাহতে ওই বৈঠকে ডাকেন শেহবাজ। সেখানে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজও উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) ভারতের বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কেও নওয়াজ শরিফকে অবহিত করেন। এ সময় ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা ঘিরে ভারতের একতরফাভাবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
লাহোরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ভারতের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তান পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভারতের জন্য নিজেদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি যেকোনও ধরনের আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে শেহবাজ শরিফ তার বড় ভাইকে বলেন, ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে পেহেলগামে আরেকটি ‘‘ফলস ফ্ল্যাগ’’ অভিযানের নাটক সাজিয়েছে ভারতীয়রা। তিনি বলেন, ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু পাকিস্তান শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ধরনের আপোষ করা হবে না।
পিএমএল-এনের সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলেছে, দু’টি পারমাণবিক অস্ত্রধর রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের কূটনৈতিক চ্যানেলের ব্যবহার চান নওয়াজ শরিফ। ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নেওয়ার বিপক্ষেও নওয়াজ শরিফ।
এদিকে, কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী বন্দুক হামলার পর পাকিস্তানে ভারতের সামরিক আক্রমণ আসন্ন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ। পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে সোমবার এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে। এই হামলার ঘটনার পর হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে। পাশাপাশি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জোরাল হয়েছে ভারতে।
কাশ্মিরে দশকের পর দশক ধরে স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাকিস্তান সমর্থন দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। হিমালয় অঞ্চল লাগোয়া ব্যাপক বিতর্কিত এই ভূখণ্ড নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দু’টি অতীতে দুবার যুদ্ধ করেছে।
সোমবার ইসলামাবাদে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছি। কারণ এখন সামরিক আক্রমণ আসন্ন। সুতরাং এই ধরনের পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা সেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’’
তিনি বলেন, কাশ্মিরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের হুমকি-ধামকি বাড়ছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতীয় হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করেছে। ভারতের এই আক্রমণ আসন্ন বলে মন্তব্য করলেও এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনও তথ্য দেননি তিনি।
সূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, এনডিটিভি।
এসএস