ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে গাজায় যুদ্ধাবসানের নতুন সম্ভাবনা দেখছে কাতার
ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে এই যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গাজায় যুদ্ধাবসান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাজেদ আল আনসারি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল সংঘাত থামিয়েছেন। এখন সময় এসেছে গাজায় যুদ্ধের অবসান নিয়ে তার মনোযোগী হওয়ার এবং আমাদের বিশ্বাস, তিনি এ ব্যাপারে আন্তরিক। আমরা এ ইস্যুতে তাকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”
বিজ্ঞাপন
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সেই অভিযানে এ পর্যন্ত সরকারি হিসেব অনুযায়ী গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ১৫৬ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ২৩৯ জন।
বিজ্ঞাপন
টানা ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।
কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। সেই সঙ্গে গাজায় খাবার ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।
এই যুদ্ধের শুরু থেকেই মধ্যস্থতার ভূমিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার এই তিন দেশ। কয়েক মাস আগে তেল আবিব এবং হামাস— উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দিয়েছিল মধ্যস্থতাকারীরা, কিন্তু কোনো পক্ষই এ পর্যন্ত এ ইস্যুতে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।
গাজায় ফের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই প্রস্তাবনায় নেতানিয়াহু সম্মতি দিলেও হামাস এখন অনুমোদন করেনি।
বুধবার সিএনএনকে মাজেদ আল আনসারি বলেন, “এটা যেমন সত্যি যে ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত থেমে যাওয়া গাজায় যুদ্ধাবসানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে— তেমনি এটাও সত্য যে এ ইস্যুতে অনেক কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে। এসব ব্যাপার নিয়ে আমি এখানে এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না; তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে ওয়াশিংটন চাইলে শিগগিরই গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্ভব।”
সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল
এসএমডব্লিউ