ফের জোটে ভাঙন, পতনের মুখে নেতানিয়াহুর সরকার
সেনাবাহিনীতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোট থেকে একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল বেরিয়ে যাওয়ায় সরকারে ভাঙনের চাপের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দলটি বেরিয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলের পার্লামেন্টে সামান্য ব্যবধানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টিকে আছেন তিনি। তবে গাজা যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে তার হাতে।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের অংশীদার ইউনাইটেড টোরাহ জুডাইজম (ইউটিজে) দলের ছয়জন সংসদ সদস্য সংসদীয় কমিটি ও মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করেছেন। ভবিষ্যতে আল্ট্রা-অর্থডক্স ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ থেকে বাদ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওই আইনপ্রণেতারা পদত্যাগ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ক্ষমতাসীন জোটের ইউটিজের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র আল্ট্রা-অর্থডক্স ‘শাস’ দলও জোট ছাড়তে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এই দলটি জোট থেকে বেরিয়ে গেলে নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে।
ইউটিজ দলীয় আইনপ্রণেতারা বলেছেন, তারা ইতোমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন; যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর কার্যকর হবে। ফলে নেতানিয়াহুর হাতে জোটের সঙ্কট সমাধানে দুই দিন সময় থাকবে। জোট সরকারে ভাঙনের এই সঙ্কট দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহুকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিরোধীদের এই পদক্ষেপ ব্যর্থ হলেও চলতি মাসের শেষের দিকে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাবে ইসরায়েলের সংসদ। ফলে সঙ্কটের সমাধানে নেতানিয়াহু আরও তিন মাস সময় পাবেন; যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও তার পদ হুমকির মুখে না পড়ে।
এদিকে, গাজা যুদ্ধবিরতি ঘিরে কাতারে চলমান আলোচনা নিয়ে জোটের উগ্র-ডানপন্থী দলগুলোর চাপের মুখে আছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনায় গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরিকল্পনা রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে হামাসের হাতে থাকা বাকি বন্দিদের অর্ধেককে মুক্ত ও বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
নতুন করে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সফল হলে পরবর্তীতে পুরো যুদ্ধ শেষ করার আলোচনার দ্বার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোৎরিচ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে থাকলেও যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ভোট রয়েছে।
মঙ্গলবার আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী টোপাজ লুক বলেছেন, সংসদে আলোচনার টেবিলে সঠিক প্রস্তাব এলে প্রধানমন্ত্রী সেটি পাস করাতে পারবেন।
• সেনাবাহিনীতে নিয়োগ নিয়ে সঙ্কট
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকরা ক্রমান্বয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটে। ওই দিন হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজার প্রায় সব বাসিন্দাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া এই যুদ্ধে গাজায় ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই বর্বর যুদ্ধে গাজার বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
চলমান এই যুদ্ধে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৈন্য হারিয়েছে ইসরায়েল। হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই বাস্তবতা ‘নতুন নিয়োগ বিল’ ঘিরে উত্তপ্ত বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। আর নেতানিয়াহুর সরকারের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কেন্দ্রে রয়েছে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের বিল।
ইসরায়েলের আল্টা-অর্থডক্স ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। যা নিয়ে অনেক ইসরায়েলির মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস