মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ নৃশংসতা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি (এএ)। তারা রোহিঙ্গাদে অপহরণ, নির্যাতন এবং শিরশ্ছেদের মতো ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) এসব অপরাধ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরেই। সম্প্রতি এই অভিযোগগুলো আরও গুরুতর হয়েছে।

ফর্টিফাই রাইটস গত ২৩ জুলাই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরাকান আর্মি তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বন্দিশিবির স্থাপন করে সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে।

ফর্টিফাই রাইটসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বেশ কিছু রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের, বিশেষ করে পুরুষদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের অনেককে নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে এবং কারও কারও শিরশ্ছেদ করা দেহ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ধানক্ষেতের মধ্যে গণকবরেরও সন্ধান মিলেছে, যেখানে বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে উঠে এসেছে, অপহৃতদের বস্তার ভেতর ভরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে তাদের খণ্ডিত লাশ পাওয়া যায়।

এইসব ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে ফর্টিফাই রাইটস বলেছে, “আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, পাশবিক নির্যাতন এবং হত্যার মতো যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে।” সংস্থাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর অপরাধের তদন্ত ও বিচার শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছে।

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিচার করা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছিল।

তবে ২০১৯ সালে আদালতটি এক রায়ে জানায়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে বিতাড়িত করার ঘটনা তদন্ত করার এখতিয়ার তাদের রয়েছে, কারণ এই অপরাধের একটি অংশ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ আইসিসির সদস্য। তারা এ আদালত এসব গণহত্যার বিচার করতে পারবে।

মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, যেহেতু মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর বিচার তারা করতে পারবে। সেই একই নিয়মে আরাকান আর্মিকেও যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।

রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘ সংঘাতের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল। আরাকান আর্মি রাখাইনের বিশাল একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। একদিকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিপীড়ন, অন্যদিকে আরাকান আর্মির নৃশংসতা— এই দুইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন রোহিঙ্গারা।

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা রাখাইনে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করে বেসামরিক নাগরিকদের, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

এমটিআই