দেশজুড়ে ব্যাপক লুটপাট
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে উত্তাল অ্যাঙ্গোলায় নিহত ২১
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাষ্ট্র অ্যাঙ্গোলায় ব্যাপক সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গত দু’দিন ধরে চলা এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে বুধবার দেশটির সরকার জানিয়েছে।
গত সোমবার দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক সহিংসতার সূত্রপাত হয়। ওই দিন ট্যাক্সিচালকরা গত জুলাইয়ে সরকারের নেওয়া জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেন। আফ্রিকার তেল-সমৃদ্ধ এই দেশটিতে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন।
বিজ্ঞাপন
১৯৭৫ সাল থেকে পর্তুগিজ ভাষাভাষী দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির ক্ষমতায় আছে এমপিএলএ (এমপিএলএ) পার্টি। ফরাসি বার্তা সংস্থা বলেছে, এমপিএলএ পার্টির শাসনকালে গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশটিতে এবারের এই সহিংসতাই সবচেয়ে ভয়াবহ।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানী লুয়ান্ডা ও অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। দু’দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দোকানপাটে লুটপাট ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা।
বিজ্ঞাপন
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যানুয়েল হোমেম বলেছেন, আমরা চলমান এই সহিংসতায় ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। নিহতদের মধ্যে পুলিশের এক কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। দেশটির প্রেসিডেন্ট জোয়াও লরেনসোর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, সহিংসতায় প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন এবং ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে সুপারমার্কেট ও গুদামে বিক্ষুব্ধ জনতা লুটপাট চালিয়ে খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। হোমেম বলেন, সহিংসতায় ৬৬টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার লুয়ান্ডার রাস্তায় ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা গেছে। এ সময় কিছু পেট্রোল পাম্প ও দোকানের সামনে দীর্ঘ সারি দেখা যায় বলে এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন। শহরের মোড়ে মোড়ে ও রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল।
অনেক দোকান বন্ধ থাকলেও দু’দিনের অচলাবস্থার পর কিছু এলাকায় গণপরিবহন ধীরে ধীরে চালু হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর বাইরেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও দাঙ্গা দেশজুড়ে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অপরাধী কিছু গোষ্ঠী এই প্রতিবাদকে ‘নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে’ পরিণত করেছে। দেশটিতে গত ১ জুলাই প্রতি লিটার জ্বালানির দাম ৩০০ কওয়ানজা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ কওয়ানজা (০.৩৩ থেকে ০.৪৩ ডলার) করা হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফের) পরামর্শ অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে বিপুল জ্বালানি ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। সরকারের এই পদক্ষেপে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষের এই দেশে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ বেকার এবং মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় ২০ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের মতে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও সীমিত প্রবৃদ্ধির কারণে দেশটিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার ৩৬ শতাংশে থাকতে পারে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস