পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরের সাম্প্রতিক পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকির জবাবে ভারত বলেছে, ইসলামাবাদের যেকোনও ধরনের দুঃসাহসিক পদক্ষেপের পরিণত অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে। দিল্লি অভিযোগ করে বলেছে, ইসলামাবাদ বার বার ভারতবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে। 

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের হুমকির জবাবে ওই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানি নেতৃত্বের কাছ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার বেপরোয়া, যুদ্ধোন্মাদ ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য লক্ষ্য করছি। নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে পাকিস্তানের বার বার ভারতবিরোধী বক্তব্য উসকে দেওয়ার এ কৌশল সবারই জানা।’’
 
তিনি বলেন, পাকিস্তানের বক্তব্যে সংযত হওয়া উচিত। কারণ যেকোনও ধরনের দুঃসাহসিক কাজের পরিণতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে। সম্প্রতি তা প্রমাণিত হয়েছে।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসীম মুনিরের ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকির জবাবে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারত। গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে অসীম মুনির ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘যদি ভারতের কাছ থেকে আমাদের অস্তিত্বের হুমকি তৈরি হয়, তাহলে পাকিস্তান অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংস হবে।’’

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসে তৃতীয় কোনও দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এমন পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি এবারই প্রথম বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। মুনির বলেন, ‘‘আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি মনে করি আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি, তাহলে আমরা আমাদের সঙ্গে অর্ধেক বিশ্বকে নিয়ে ধ্বংস হব।’’

তিনি বলেন, পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, ভারতের সিন্ধ নদের এমন পানি-চ্যানেলগুলোর অবকাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এই পানির উৎস ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। তিনি অভিযোগ করেন, গত এপ্রিলে পেহালগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সিন্ধ পানি চুক্তি স্থগিত করায় ২৫ কোটি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে পড়েছেন।

অসীম মুনির বলেন, ‘‘আমরা অপেক্ষা করব ভারতের যখন বাঁধ তৈরি শেষ হবে, তখন আমরা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র মেরে তা ধ্বংস করে দেব। সিন্ধ নদ ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও ঘাটতি নেই, আলহামদুলিল্লাহ।’’

পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোও ভারতের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের কর্মকাণ্ড পাকিস্তানের ‘‘মহা ক্ষতি’’ করেছে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য পাকিস্তানিদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিলাওয়াল বলেন, মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকারের নেওয়া সব পদক্ষেপ পাকিস্তানের ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও এ ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ভারত সিন্ধ পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখলে পাকিস্তানের ‘যুদ্ধ ছাড়া আর কোনও বিকল্প থাকবে না।’

তিনি বলেন, আপনারা (পাকিস্তানিরা) যুদ্ধ করার মতো শক্তিশালী, যাতে ছয়টি নদী ফেরত পাওয়া যায়। ভারত যদি এই পথে চলতে থাকে, তাহলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যুদ্ধসহ আমাদের কাছে সব বিকল্প উন্মুক্ত থাকবে।

‘‘আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি। কিন্তু ভারতীয়রা যদি অপারেশন সিঁদুরের মতো হামলার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত, পাকিস্তানের প্রত্যেকটি প্রদেশের মানুষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আর এ যুদ্ধে ভারতীয়রা নিশ্চিতভাবেই হারবে। আমরা মাথা নত করব না।’’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি সিন্ধ পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে, তাহলে দেশটিকে কানে ধরে শিক্ষা দেওয়া হবে। তিনি বলেন,
‘‘আমি আজ শত্রুকে বলতে চাই, যদি তুমি আমাদের পানি বন্ধ করার হুমকি দাও, তাহলে মনে রেখো—পাকিস্তানের এক ফোঁটা পানিও কেড়ে নিতে পারবে না।’’

সম্প্রতি সিন্ধ পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের সিদ্ধান্তে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে দেওয়া এই আদালতের রায় পাকিস্তানের অবস্থানে সমর্থন জানিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান বলছে, এটি সিন্ধ পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় তাদের অবস্থানকে বৈধতা দিয়েছে; যা ভারত পেহেলগাম হামলার পর থেকে স্থগিত রেখেছে।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা কখনই আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের বৈধতা, কর্তৃত্ব বা এখতিয়ারকে স্বীকার করেনি। রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, আদালতের রায় এখতিয়ারবিহীন, আইনি দিক থেকে ভিত্তিহীন এবং ভারতের পানি ব্যবহারের অধিকারের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। পাকিস্তানের বিভ্রান্তিকর ও বাছাইকৃত বক্তব্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।

সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়া ট্যুডে।

এসএস