১৯৭৫ সালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সিকিমকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে ভোট দেয় সেখানকার স্থানীয় সংসদ। এরমাধ্যমে সিকিম ভারতের ২২তম রাজ্যে পরিণত হয়।

অনেকটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সিকিমকে নিজেদের রাজ্যে পরিণত করেছিল নয়াদিল্লি। এতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন দেশটির বর্তমান নিরাপত্তা পরামর্শক অজিত দোভাল।

১৯৭০ সালের শুরুর দিকে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন সিকিমের সাধারণ মানুষ। সিকিমের রাজারা চোগিয়াল নামে পরিচিত ছিলেন। ১৬৪২ সাল থেকে চোগিয়ালরা ছিল সিকিমের নিয়ন্ত্রণে।

১৯৭৩ সালে চোগিয়ালদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ চূড়ান্ত রূপ নেয়। তারা গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। একটা সময় আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিলে সিকিমে ১৯৭৪ সালে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সেখানে সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সে বছর সেখানে নির্বাচন হয়। এতে ইতিহাসের বিতর্কিত ব্যক্তি লেন্দুপ দর্জি প্রধানমন্ত্রী হন।

এর পরের বছরই সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনি সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দেন। ভারত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

সুযোগের সদ্ব্যবহার

ব্রিটিশরা ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার পর সিকিম ভারতের একটি প্রটেক্টরেট হয়। এই শাসনে রাজা ছিলেন সিকিমের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মূল শাসক। অপরদিকে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ের দায়িত্ব ছিল ভারতের। তবে ১৯৬৫ সালে পালদেন থোনদুপ নামগাল রাজা হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে।

তিনি ভারত বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভারতের আশঙ্কা ছিল তিনি সিকিমকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করবেন।

পালদেন থোনদুপ নামগাল রাজা হওয়ার দুই বছর আগে তিনি হোপ কুক নামে এক মার্কিন নারীর সঙ্গে পরিচিত হন। এ নারী তার মার্কিন নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে পালদেন থোনদুপকে বিয়ে করেন এবং তিনি রানি হন।

এরপর তিনি তার স্বামীকে পরামর্শ দেন সিকিমকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা দিতে। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তিনি সাক্ষাৎকার দিতেন, যেগুলোতে বলতেন ভারতের চাপ মোকাবিলা করছেন তারা। এ বিষয়টি ভারতকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। ভারতের সন্দেহ ছিল হোপ কুকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র যোগাযোগ আছে। যারা তার মাধ্যমে সিকিমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এখানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

রানি হোপ কুক যখন সিকিমকে স্বাধীন ঘোষণার চেষ্টা করেন তখন সেখানে যান অজিত দোভাল। তিনি সেখানে গোয়েন্দাগিরি করেন এবং সিকিমের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান। এর কয়েক বছরের মধ্যে সেখানে রাজশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর জেরে ১৯৭৫ সালে সিকিম তার স্বায়ত্ত্বশাসনই হারায়।

সূত্র: এনডিটিভি

এমটিআই