যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পরিবর্তন দেখে অবাক
নেতানিয়াহুর কথায় মুসলিম নেতাদের দেওয়া জবান বদলে ফেলেছেন ট্রাম্প
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে কয়েক সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করেছেন বিশ্বের আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা। দুই সপ্তাহ আগে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে ৮ মুসলিম নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে যুদ্ধবিরতির একটি কাঠামো প্রস্তুত করেন তারা।
তবে গত সোমবার দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের দেওয়া সেসব কথা বদলে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওইদিন তিনি ২০ দফার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ঘোষণা করেন। যা আরব নেতাদের দেখানো দফাগুলোর চেয়ে অনেক ভিন্ন ছিল।
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যম মিডেল ইস্ট আই বুধবার (১ অক্টোবর) জানিয়েছে, এমন পরিবর্তন দেখে মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা বেশ অবাক হয়েছেন।
যারমধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ছিল যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির সংখ্যা কমানো এবং ধাপে ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করার বিষয়টি।
বিজ্ঞাপন
একটি সূত্র বলেছেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ইচ্ছা অনুযায়ী ধারাগুলোতে পরিবর্তন এনেছেন।
যেখানে আরব নেতাদের সঙ্গে হওয়া খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যুদ্ধবিরতি হলে কয়েকশ দণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। একইসঙ্গে গাজা থেকে ধরে আনা ১ হাজার ৭০০ নারী-পুরুষ-শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প যে প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন সেখানে মাত্র ২৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যা আরব নেতাদের কল্পনারও বাইরে ছিল।
অপরদিকে আরব নেতাদের ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রতিদিন গাজায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাকম প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে এ সংক্রান্ত স্পষ্ট কোনো কথাই নেই। অর্থাৎ দখলদাররা চাইলে যুদ্ধবিরতির পরও ত্রাণের ট্রাক আটকে রাখতে পারবে।
এছাড়া শাসন ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে ট্রাম্প বলেছেন গাজা শাসন করবে ‘বোর্ড অব পিস’। যেটির প্রধান হবে তিনি নিজে। আর সহ-প্রধান হবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। অর্থাৎ ট্রাম্প নিজে গাজার ক্ষমতা নিচ্ছেন। এতে করে গাজা শাসনে আন্তর্জাতিক পরামর্শের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
আগের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক স্থিতিকরণ বাহিনী নামে একটি বাহিনী তৈরি করা হবে। যেটি ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে এমন ধারা দেওয়া হয়েছে, যেটি গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে রাখবে।
তুরস্ক, মিসর এবং জর্ডান গাজায় ট্রাম্পের প্রস্তাবিক আন্তির্জাতিক বাহিনী গঠনে বিশেষ ভেটো দিয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও দেশগুলো মনে করছে ট্রাম্পের কাছ থেকে তারা অনেক ছাড় আদায় করে নিতে পেরেছেন। যেমন— গাজার মানুষ গাজাতেই থাকবেন। তাদের অন্য কোথাও পাঠানো হবে না। ইসরায়েলও এতে সম্মত হয়েছন। এছাড়া দখলদার ইসরায়েল কথা দিয়েছে তারা স্থায়ীভাবে গাজা দখল করবে না।
মিডেল ইস্ট আই জানিয়েছে, আগের প্রস্তাবের তুলনায় নতুন প্রস্তাবে এত বড় পরিবর্তন থাকলেও আরব দেশগুলো হামাসকে এ প্রস্তাব মেনে নিতে চাপ দিচ্ছে। কারণ এতে করে অন্তত গাজার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ অন্তত বন্ধ হবে।
সূত্র: দ্য মিডল ইস্ট আই
এমটিআই