• বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে ডিসেম্বরে কঠোর লকডাউনে যায় ভুটান
• লকডাউনের প্রায় ১০ মাস পর শুক্রবার করোনায় প্রথম মৃত্যু
• দেশটিতে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭৭০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন
• ভ্যাকসিন পেতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে ভুটানের সরকার 

বৈশ্বিক মহামারি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে চাওয়ার প্রায় ১০ মাস পর হিমালয় অঞ্চলের দেশ ভুটানে করোনাভাইরাসে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার এই দেশটিতে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তি মারা গেছেন। 

ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, শুক্রবার ভুটানে করোনাভাইরাসে প্রথম ৩৪ বছর বয়সী এক যুবকের প্রাণহানি ঘটেছে। লিভারের জটিলতা নিয়ে রাজধানী থিম্পুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবকের করোনা ধরা পড়ে গত ২৩ ডিসেম্বর। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে তার মৃত্যু ঘোষণা করেছে।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি চরম আকার ধারণ করলে গত মার্চে আন্তর্জাতিক সব বিমানের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে ভুটান। গত কয়েক মাস ধরে দেশে কোনও বিদেশি পর্যটক প্রবেশ করতে পারেননি বলে জানিয়েছে ভুটানের সরকার।

গত ডিসেম্বরে এক নারী প্রবাসী করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে আসার পর দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করে ভুটান। প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের এই দেশের প্রায় সব প্রান্তে এই নারীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা ছড়িয়ে পড়েন।

ডিসেম্বরের শুরুর দিকে দেশটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা ৪০০ থেকে একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭০ জনে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ১৫ থেকে ১৭ জনের মধ্যে থাকলে স্বস্তি প্রকাশ করা হলেও ভুটানে তা দেখা যায়নি। বরং দেশটির সরকার করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ভীত হয়ে পড়ে।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে চলমান করোনার প্রাদুর্ভাব আগের প্রাদুর্ভাবের চেয়ে অনেক বেশি। 

বিদেশ এবং নিজ জেলার বাইরে যাওয়ার জন্য এখনও দেশটির নাগরিকদের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে অনুমতি নিতে হয়। রাজধানী থিম্পু এবং পার্শ্ববর্তী পারো জেলায় নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রী কেনার জন্য ‌‘বিশেষ চলাফেরা’ কার্ড নেয়ার বিধান করা হয়েছে।

রাজধানী থিম্পুতে জনপ্রিয় একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁ পরিচালনাকারী কারমা তেনজিন বলেন, লকডাউন কঠোর হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এখনও দোকানের ভাড়া এবং কর্মীদের বেতন দিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত এটি অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ভুটানের সরকার বলছে, ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলে তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রতিবেশি ভারত এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হলেও ভুটানে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন একজন।

করোনায় মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারে বাতের ওষুধ

টোসিলিজুমাব নামের একটি বাতের ওষুধ গুরুতর করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি এক চতুর্থাংশ হ্রাস করে বলে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। দেশটির সরকারের অর্থায়নে ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল কলেজের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, গুরুতর আক্রান্ত কোনও রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এই ওষুধ দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে ওই রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে ২৪ শতাংশ।

যেসব রোগীর চিকিৎসায় টোসিলিজুমাব ব্যবহার করা হয়েছে, অন্যান্য রোগীদের তুলনায় তাদের অনেক কম সময় আইসিইউতে থাকতে হয়েছে

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৮৬ লাখ ৪২ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯ হাজার। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। 

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম আঘাত হানা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় অনেক ধনী দেশ ইতোমধ্যে নাগরিকদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে।

করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি

• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে
• ১১ মার্চ ‌‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ধুঁকছে; তখন অন্তত ৬০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এরমধ্যে ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, মার্কিন ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক, মার্কিন মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনও রয়েছে।

এসএস