বাইডেনের অভিষেকে ট্রাম্পের না
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে যাবেন না বলে জানিয়েছেন দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) এ কথা জানান তিনি।
এদিকে নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগ্রহণের অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতির ঘটনা সর্বশেষ ১৮৬৯ সালে ঘটেছিল বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
‘আরও বেশি সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার আশঙ্কায়’ শুক্রবার ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। তবে এর আগেই এক টুইট বার্তায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লেখেন,‘যারা জানতে চেয়েছেন তাদের বলছি- আমি ২০ জানুয়ারির অভিষেক অনুষ্ঠানে যাচ্ছি না।’
এমন এক সময় ট্রাম্প এই ঘোষণা দিলেন যখন ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে গত বুধবার হামলায় উস্কানি দেওয়ার জন্য ডেমোক্র্যাটরা সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে অপসারণ করার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এখন পর্যন্ত এরকম কিছু করার ইঙ্গিত দেননি।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতেই নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে।
ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রক্রিয়াও শুরু করা হলেও তা সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিরোধীরা। কারণ ট্রাম্পের মেয়াদের আর ১১ দিন বাকি আছে।
গত বুধবার জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করতে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের যৌথ অধিবেশন বসে। সেসময় অধিবেশন বানচাল করতে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কংগ্রেসে হামলা চালায়। এতে নারী ও এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন। হামলার আগে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প উসকানিমূলক বক্তব্য রাখেন এবং এরপরই ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের হামলার ঘটনার পর প্রথমবারের মতো বাইডেনের বিজয় মেনে নেন ট্রাম্প। অধিকাংশের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের ‘পিঠ বাঁচাতে’ বা ‘দায়ে পড়ে’ জো বাইডেনকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছেন ট্রাম্প।
নিজের নড়বড়ে প্রশাসন এবং অভিশংসনের হুমকির মুখে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশেষে বৃহস্পতিবার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছেন, অর্থাৎ গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করেছেন তিনি।
তবে এমন এক সময়ে তিনি পরাজয় স্বীকার করলেন যখন তার বন্ধু এবং অনুগত ব্যক্তিরা একে একে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, দেশব্যাপী তাকে অভিশংসনের দাবি উঠছে, অপরাধে যুক্ততার যথাযথ প্রমাণ উপস্থিত রয়েছে, এমনকি প্রশ্ন উঠেছে তার মানসিক সুস্থতা নিয়েও।
যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি হবেন দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যাকে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস এর স্পিকার এবং নিউইয়র্ক ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা সিনেটর চাক শুমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হোয়াইট হাউস থেকে জরুরিভিত্তিতে ট্রাম্পকে সরানো যায় কিনা সেবিষয়ে পরামর্শ করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে তারা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের বিপজ্জনক এবং রাষ্ট্রদ্রোহীতাপূর্ণ আচরণের প্রেক্ষিতে যত দ্রুত সম্ভব তাকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা আপনার পরামর্শ চাই।’
নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে না যাওয়া চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সবশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬৯ সালে।
সেসময় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন - পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস গ্র্যান্টের সঙ্গে একই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
টিএম