শপথে ট্রাম্পের না আসা খুবই ভালো: বাইডেন
আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের না থাকার সিদ্ধান্তে খুশি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, শপথে ট্রাম্পের না যাওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি একমত।
মন্ত্রিসভার মনোনীত সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়ার পর ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন একথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আজ পর্যন্ত হাতে গোনা যে কয়েকটি বিষয়ে একমত হতে পেরেছি, তার মধ্যে এটি (শপথে ট্রাম্পের না আসা) একটি।
গত বুধবার জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করতে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের যৌথ অধিবেশন বসে। সেসময় অধিবেশন বানচাল করতে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কংগ্রেসে হামলা চালায়। এতে নারী ও এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন। হামলার আগে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প উসকানিমূলক বক্তব্য রাখেন এবং এরপরই ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
ক্যাপিটল ভবনে হামলা করতে সমর্থকদের উসকানি ও প্রচারণা দেওয়ায় ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করে জো বাইডেন বলেন,‘তার (ট্রাম্প) সম্পর্কে আমার যে খারাপ ধারণা রয়েছে, সেটিকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন।’
ট্রাম্প দেশের জন্য বিব্রতকর, বিশ্বের কাছে আমাদেরকে বিব্রত করছেন তিনি। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকার কোনো যোগ্যতা তার নেই
জো বাইডেন
এর আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে যাবেন না বলে শুক্রবার জানিয়ে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার আগে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় এ কথা জানান তিনি।
ট্রাম্প লেখেন,‘যারা জানতে চেয়েছেন তাদের বলছি- আমি ২০ জানুয়ারির অভিষেক অনুষ্ঠানে যাচ্ছি না।’
ট্রাম্প না থাকলেও শপথ অনুষ্ঠানে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘মাইক পেন্সকে স্বাগত। প্রশাসনের পরিবর্তনগুলো আনার ক্ষেত্রে অতীত অবস্থাটা বিবেচনা করাও জরুরি বলে আমি মনে করি। শপথ অনুষ্ঠানে মাইক পেন্সকে আমরা সম্মানিত।’
এমন এক সময় ট্রাম্প এই ঘোষণা দিলেন যখন ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে গত বুধবার হামলায় উস্কানি দেওয়ার জন্য ডেমোক্র্যাটরা সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে অপসারণ করার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এখন পর্যন্ত এরকম কিছু করার ইঙ্গিত দেননি।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতেই নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে।
তবে এমন এক সময়ে তিনি পরাজয় স্বীকার করলেন যখন তার বন্ধু এবং অনুগত ব্যক্তিরা একে একে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, দেশব্যাপী তাকে অভিশংসনের দাবি উঠছে, অপরাধে যুক্ততার যথাযথ প্রমাণ উপস্থিত রয়েছে, এমনকি প্রশ্ন উঠেছে তার মানসিক সুস্থতা নিয়েও।
যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি হবেন দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যাকে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হবে।
ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রক্রিয়াও শুরু করা হলেও তা সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিরোধীরা। কারণ ট্রাম্পের মেয়াদের আর ১১ দিন বাকি আছে।
নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে না যাওয়া চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সবশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬৯ সালে।
সেসময় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন - পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস গ্র্যান্টের সঙ্গে একই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
অধিকাংশের মতে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে অবিরতভাবে ভোট কারচুপির অভিযোগ করে আসা ট্রাম্প বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের ‘পিঠ বাঁচাতে’ বা ‘দায়ে পড়ে’ জো বাইডেনকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছেন। আর মুখ লুকাতেই দীর্ঘদিনের নিয়ম ভেঙে আগামী ২০ জানুয়ারির শপথ অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকবেন তিনি।
তবে শপথ অনুষ্ঠানে হাজির না হয়ে কী ট্রাম্প নিজের মুখটা লুকিয়ে রাখতে পারবেন?
সূত্র: সিএনএন ও আলজাজিরা
টিএম