তালেবানদের সাম্প্রতিক উত্থানের জন্য দায়ী পাকিস্তান
সাবেক মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন
আফগানিস্তানে সম্প্রতি শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য প্রধান হুমকি হয়ে ওঠা তালেবানগোষ্ঠীর শক্তিবৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা জন বোল্টন। শনিবার দেশটির সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের ফলেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তালেবানগোষ্ঠী।
আফগানিস্তানে তালেবানরা যদি জাতীয় ক্ষমতার অংশীদার হয়ে ওঠে, তাহলে পরবর্তীতে তারা পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে দেশটির সরকারকে সতর্কও করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সাক্ষাৎকারে জন বোল্টন বলেন, ‘তালেবানগোষ্ঠী ফের আফগানিস্তানের জাতীয় ক্ষমতায় আসতে চাইছে। গত দু-দশকে তারা ব্যাপক শক্তি অর্জন করেছে এবং এর জন্য পাকিস্তান সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ সরাসরি দায়ী। তাদের কারণে বরাবরই তালেবানগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ স্বর্গ ছিল পাকিস্তান।’
সাবেক এই মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তালেবানরা যখনই যুক্তরাষ্ট্র বা আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা করতে চেয়েছে, তখনই তারা ইসলামাবাদের একাংশের সমর্থন পেয়েছে; কিন্তু বাস্তব্য সত্য হলো, তালেবানরা যদি আফগানিস্তানের জাতীয় ক্ষমতার অংশীদার হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে তাদের প্রভাবে পাকিস্তানেও সন্ত্রাসী তৎপরতা ব্যাপকভাবে বাড়বে এবং এটি দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করবে।’
বিজ্ঞাপন
‘আমি ওই অঞ্চলের(পাকিস্তান-আফগানিস্তান) ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু কূটনীতিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে দেশটিতে ৬৫০ মার্কিন সৈন্য অবস্থান করবে বলে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
যুক্তরাষ্টের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সিনেটের সামরিক বাহিনী বিষয়ক কমিটির সদস্য জিম ইনহফও সম্প্রতি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু সংখ্যক মার্কিন সৈন্যের একটি দল আফগানিস্তানে থাকা উচিত।
সাক্ষাৎকারে জন বোল্টন এ বিষয়ে সায় দিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নিলে দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনীর মনোবলে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করতে গত ২৩ জুন ওয়াশিংটনের উদ্দেশে কাবুল ছেড়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। এই সফরে তার সঙ্গে আছেন আফগানিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গোষ্ঠীর মধ্যে সমন্বয় ও ঐক্য বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় কাউন্সিলের প্রধান ড. আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহসহ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন।
এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে জন বোল্টন বলেন, ‘আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে আবারও তালেবানগোষ্ঠীর সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির বিভিন্ন শহরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে প্রায়ই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তালেবানের যোদ্ধারা।
রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি বাহিনী এবং তালেবানের যোদ্ধাদের কয়েকদিনের সংঘর্ষে কুন্দুজের প্রায় ৫ হাজার পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, কান্দাহার এবং বাঘলান প্রদেশে তালেবান-সরকারি বাহিনীর তীব্র লড়াই অব্যাহত আছে। তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূখণ্ড উদ্ধারের দাবি করেছে আফগান সরকারি বাহিনী।
সূত্র: এএনআই, এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ