ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির কোনো নেতা-কর্মী যদি ফেসবুকে বিজেপি বিরোধী কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, কিংবা দলবিরোধী কোনো পোস্টে ‘লাইক’ দেন, সেক্ষেত্রে ‘দোষী’ ওই নেতা কিংবা কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শনিবার রাজ্য বিজেপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে দলের নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার লোকসভা সদস্য সুভাষ সরকারকে প্রধান করে ইতোমধ্যে ‘শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি’ নামে একটি কমিটি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিসূত্রে জানা গেছে, দলীয় ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে এর মধ্যে শোকজ চিঠি দিয়েছে সেই কমিটি। পাশপাশি কয়েক জন নেতা-কর্মীকে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে তলব করে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সুভাষ সরকার হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, ‘‌আমরা নেতা–কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, দলবিরোধী পোস্ট না করতে। দলবিরোধী কাউকে ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় রাখা যাবে না। কোনো নেতা বা কর্মী এই নির্দেশ না মানলে পার্টি কড়া ব্যবস্থা নেবে।’‌

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় কাজ করেছে। একটি হলো- সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিজেপি নেতৃবৃন্দের ধারণা হয়েছে- এর পেছনে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্তর্ঘাত। তাই এবার ছাকনি দিয়ে শুদ্ধি অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির রাজ্য হাইকমান্ড।

অপর বিষয়টি হলো- বিধানসভা নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে গত বছরের শেষ থেকে যে পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে জাঁক-জমকপূর্ণ প্রচারাভিযান শুরু করেছিল বিজেপি, তাতে অনেকেই প্রভাবিত হয়ে তৃণমূল বা সিপিএম থেকে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন; কিন্তু নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারের পর তাদের সেই মোহ ভেঙে গেছে।

তৃণমূল কংগ্রেস থেকে যারা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, নির্বাচনে হারের পর তাদের অনেকেই পুরনো দলে ফিরতে চেয়েছিলেন- কিন্তু দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপিতে গিয়ে যারা তৃণমূল কংগ্রেসের নিন্দা ও কূৎসা করেছেন তাদেরকে দলে ফেরত নেওয়া হবে না।

ফলে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে বিজেপির ওপর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিজেপির নিচুস্তরের কর্মী থেকে শুরু করে রাজ্য স্তরের কয়েকজন নেতাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।

এর প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে শঙ্কার উদ্রেক হয়েছে যে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে পার্টিতে অনুশাসন বলে আর কিছু থাকবে না। তাই এবার সক্রিয় করে তোলা হয়েছে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বহু বিজেপি কর্মী নিজেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু না লিখলেও অন্য কোনও বিক্ষুব্ধ কর্মীর পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করেছেন। তার স্ক্রিনশটও বিজেপির শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির হাতে এসে পৌঁছেছে।

তবে বিজেপির এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির অনেক নেতা-কর্মী। অনেকেই বলেছেন, ‘‌এটা কেমন ফতোয়া! ফেসবুকে কে কার বন্ধু হবেন, সেটাও দল ঠিক করে দেবে নাকি! এভাবে কর্মীদের ক্ষোভ চেপে রাখা অসম্ভব।’‌

এসএমডব্লিউ