দুই ডোজের ভিন্ন টিকা দেয় অধিক সুরক্ষা
করোনার টিকার দুই ডোজে দু’টি ভিন্ন কোম্পানির টিকা দেওয়া হলে মানবদেহে প্রাণঘাতী এই রোগটির বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত বেশি সুরক্ষা ও প্রতিরোধী শক্তি তৈরি হয়। যুক্তরাজ্যের সরকারী স্বাস্থ্যসেবা দফতরের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে সমন্বিত টিকাদান কার্যক্রম (কম্বাইন্ড কোভ ট্রায়াল) নামে সীমিত পরিসরে একটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেছে। ৫০ বা তার কিছু অধিক বয়সী ৮৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
স্বেচ্ছাসেবকদের তিনটি দলে ভাগ করে প্রথম দলকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজারের দু’ডোজ টিকা, দ্বিতীয় দলের সদস্যদের প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও দ্বিতীয় ডোজে ফাইজারের টিকা এবং তৃতীয় দলের সদস্যদের প্রথম ডোজে ফাইজার ও দ্বিতীয় ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়।
দু-সপ্তাহ পর স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যারা প্রথম ডোজে ফাইজার ও দ্বিতীয় ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাদের চেয়ে যারা প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও দ্বিতীয় ডোজে ফাইজারের টিকা নিয়েছেন- তাদের দেহে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ অ্যান্টিবডি ও টি সেলের অস্তিত্ব রয়েছে।
তবে, যারা দুই ডোজেই অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজারের টিকা নিয়েছেন, তাদের চেয়ে দুই ডোজে দু’কোম্পনির টিকা নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে অ্যান্টিবডি ও টি সেলের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
টি সেল হলো একধরনের কোষ- যার মূল কাজ মানব দেহে প্রবেশ করা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা এবং এটিকে নিষ্ক্রিয় করা। অনেকের দেহে প্রাকৃতিকভাবেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক টি সেলের অস্তিত্ব থাকে, আবার অনেকের দেহে এর পরিমাণ থাকে প্রয়োজনের তুলনায় অল্প।
বয়স্ক ব্যক্তিদের দেহে সাধারণত টি সেলের পরিমাণ কম থাকে, এ কারণে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া, গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে বেশি।
সাম্প্রতিক এই গবেষণার ফল প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, যারা দুই ডোজে একই কোম্পানির টিকা নিয়েছেন, তারা যদি দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বুস্টার হিসেবে তৃতীয় ডোজে ফাইজার বা মডার্নার করোনা টিকার একটি ডোজ নেন, সেক্ষেত্রে তারা প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রায় সম্পূর্ণ সুরক্ষা উপভোগ করতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার) অধ্যাপক জোনাথন ভ্যান ট্যাম বিবিসিকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বর্তমানে যে টিকাদান কর্মসূচি চলছে সেখানে সবাইকে দুই ডোজে একই কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আমরা প্রস্তাব করছি না।’
‘আমাদের প্রস্তাব হলো, যারা ইতোমধ্যে দুই ডোজে একই কোম্পানি টিকা নিয়েছেন, বুস্টার ডোজ হিসেবে তাদেরকে যদি তৃতীয় ডোজে অন্য একটি কোম্পানির টিকা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে তারা প্রাণঘাতী এই রোগটি থেকে অনেক বেশি সুরক্ষা উপভোগ করবেন।’
‘তাছাড়া বিভিন্ন দেশে ব্যাপকহারে করোনা রোগী বাড়ার ফলে বিশ্বজুড়েই টিকার ডোজের সংকট দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে রকম পরিস্থিতিতে এই পন্থা নেওয়া হলে টিকাদান কর্মসূচি গতিশীল রাখা সহজ হবে।’
ইউরোপের অনেক দেশ অবশ্য ইতোমধ্যেই তাদের নাগরিকদের দুই ডোজে দুই কোম্পানির টিকা নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। বিশেষ করে স্পেন ও জার্মানিতে যারা প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশকেই দ্বিতীয় ডোজ ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এর প্রধান কারণ হিসেবে এই দুই দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নেওয়ার পর কয়েক জনের দেহে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ