জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের সময় গত বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুনে সামরিক বাহিনীর একটি পোশাকে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের চারজন মন্ত্রীসহ ২২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত এবং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল দেশটি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, সেনা অভ্যুত্থানে সহযোগিতা ও সাধারণ গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে বাইডেন প্রশাসনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে জান্তা সরকারের নিয়োগ করা জাতীয় প্রশাসনিক পরিষদের ৩ সদস্য, জান্তা সরকারের ৪ জন মন্ত্রী ও দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ১৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান।

এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের ওপর বার্মিজ সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে বাস্তবায়িত সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আমরা এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।’

এদিকে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’ ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ সব কারাবন্দিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে গত বৃহস্পতিবার দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগী মুখপাত্র এরি কানেকো সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আগেও বহুবার বলেছি, আবারও বলছি- অবিলম্বে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ সব কারাবন্দিকে মুক্তি দিন।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়।

পরে ‘নির্বাচনে অনিয়মের’ অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয় সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেন তারা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।

টানা আন্দোলন ও বিক্ষোভের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধের কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ায় অচল হয়ে যায় দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রমও।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

মিয়ানমারের কারাবন্দিদের সহায়তা দানকারী বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জান্তা সরকারের বাহিনীর গুলিতে ৮৮৩ জন নিহত হয়েছেন এবং কারাগারে অন্তরীণ আছেন ৫ হাজার ২০০-এরও বেশি বিক্ষোভকারী।

টিএম