ইন্দোনেশীয় উড়োজাহাজের সব আরোহীর মৃত্যুর শঙ্কা
উড়োজাহাজটিতে থাকা আরোহীদের স্বজনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অপেক্ষা
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ রাজধানী জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের পরপরই ৬২ আরোহীসহ একটি উড়োজাহাজ জাকার্তা উপসাগরে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করলেও ১৬ ঘণ্টায় কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ফলে এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, জাকার্তা উপসাগরে বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়ার বিমান সংস্থা শ্রীবিজয়া এয়ারের বোয়িং ৭৩৭-৫০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজটির যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের কেউই হয়তো আর বেঁচে নেই।
বিজ্ঞাপন
জাকার্তা থেকে ওয়েস্ট কালিমান্তান প্রদেশের রাজধানী পনতিয়ানাকের উদ্দেশে শনিবার স্থানীয় সময় দুপর তিনটার দিকে উড়াল দেওয়ার চার মিনিট পরই রাডারের সঙ্গে উড়োজাহাজটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জাকার্তার সোকরানো হাত্তা বিমানবন্দর থেকে ১২ মাইল দূরে যাত্রীবাহী ওই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী বুদি কারিয়ার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যার পর জানিয়েছিল, সোকরানো হাত্তা বিমানবন্দর থেকে ১২ মাইল দূরে যাত্রীবাহী ওই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
পরিবহনমন্ত্রী বুদি কারিয়া আরও জানিয়েছেন, জাকার্তার উত্তরের লাংকাং দ্বীপ ও লাকি দ্বীপের মধ্যবর্তী এলাকায় অনুসন্ধান কাজ চলছে। চারটি যুদ্ধজাহাজসহ বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী জাহাজ এ অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
নৌবাহিনীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, সাগরে উড়োজাহাজটির বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান খুঁজে পেয়েছেন তারা। সাগরের যে এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই এলাকায় নৌযানও মোতায়েন করা হয়েছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকার ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টুয়েনটিফোরডটকম জানাচ্ছে, ফ্লাইট এসজে ১৮২ এর সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে বিমানটির উচ্চতা ১০ হাজার ফুট পড়ে গিয়েছিল।
প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা বলছেন, বিমানটিকে বিধ্বস্ত হতে দেখেছেন তারা। কমপক্ষে একবার তারা বিষ্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এছাড়া সাগরের ওই এলাকা থেকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও জামা কাপড়ের টুকরো পাওয়া গেছে।
উড়োজাহাজটি বজ্রপাতের মতো সাগরে বিধ্বস্ত হয় এবং মুহূর্তের মধ্যে তা বিষ্ফোরিত হয়
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় জেলে
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত ও বিষ্ফোরিত হওয়ার সময় সেখানে মাছ ধরছিলেন স্থানীয় জেলে সলিহিন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘উড়োজাহাজটি বজ্রপাতের মতো সাগরে বিধ্বস্ত হয় এবং মুহূর্তের মধ্যে তা বিষ্ফোরিত হয়।’
উড়োজাহাজটি সাগরের যেই অংশ থেকে নিখোঁজ হয়েছে, তার পাশের একটি দ্বীপের বাসিন্দারা বিবিসি বলেন, তারা এমন কিছু বস্তু খুঁজে পেয়েছেন যা বিধ্বস্ত হওয়া ওই উড়োজাহাজের অংশ বলেই তাদের ধারণা।
শনিবার দুপুরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর রাত পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। রাতে উদ্ধার অভিযান বন্ধ ছিল। রোববার সকালে অনুসন্ধান আবার শুরু হয়েছে।
শনিবার উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু হওয়ার পর দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি টহল নৌকা দুর্ঘটনাস্থল থেকে মানবদেহের কিছু অংশ খুঁজে পায় বলে জানিয়েছিল স্থানীয় গণমাধ্যম কম্পাস।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার হওয়া কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে নিখোঁজ উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ বলে মনে হচ্ছে। কিছু ধ্বংসাবশেষের ছবি ইন্দোনেশিয়ার টেলিভিশনগুলোতেও প্রচার করা হয়েছে।
এয়ারলাইন থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ফ্লাইটটিতে মোট ৫৬ জন যাত্রী, দুজন পাইলট ও চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন। তাদের সবাই ইন্দোনেশীয় নাগরিক বলে জানিয়েছে দেশটির ট্রান্সপোর্ট সেফটি কমিটি।
বিগত ২৭ বছর ধরে বহরে থাকলেও দুর্ঘটনার পর শ্রীবিজয়া এয়ারের প্রধান নির্বাহী জেফরসন ইরউইন জাউয়েনা বলেন, উড়োজাহাজটির সার্বিক অবস্থা ভালো ছিল। ফ্লাইট ৩০ মিনিট দেরি হয়েছিল ভারী বৃষ্টির কারণে।
২০১৮’র অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স সাগরে বিধ্বস্ত হলে ১৮৯ আরোহীর মৃত্যু হয়। তবে এই ফ্লাইটটি বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স নয়, যেটি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুটি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েছে।
এএস