করোনায় দৈনিক সংক্রমণে ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে এতদিন সর্বোচ্চ দৈনিক আক্রান্তের দেশ ছিল ভারত। তবে ইন্দোনেশিয়া সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, খুব দ্রুতই দেশটি এশিয়ায় করোনার কেন্দ্রস্থলে (এপিসেন্টার) পরিণত হতে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে দৈনিক আক্রান্তের হিসেবে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়া। গত সোমবার ও মঙ্গলবার- দু’দিনে দেশটিতে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে শুধু মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ায় নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৮৯৯ জন। অন্যদিকে একই দিন ভারতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজারেরও কম।
বিজ্ঞাপন
অথচ, মাত্র এক মাস আগেও ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিদিন করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কোঠায়।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে ইন্দোনেশিয়া ও ভারত- এশিয়ার বৃহৎ দুই দেশের করোনা পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র হাজির করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাতদিনের হিসেবে আক্রান্তের হিসেবে ইন্দোনেশিয়া এগিয়ে থাকলেও মৃত্যুর হিসেবে এগিয়ে আছে ভারত।
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ায় গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৯০৭ জন মারা গেছেন, অন্যদিকে এই সময়সীমায় ভারতে প্রতিদিন মারা গেছেন গড়ে ১ হাজার ৭২ জন।
ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনার অতিসংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রভাবে দেশটির জাভা, সুমাত্রা, বালি, পাপুয়াসহ প্রায় সবগুলো দ্বীপে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টিকাদান কর্মসূচীতে ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে ভারত কিছুটা এগিয়ে থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে আছে দু’টি দেশই।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টিকাদান কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত দেশের মোট জনগণের মাত্র ১৪ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে। ইন্দোনেশিয়ায় এই হার আরও কম- মাত্র ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে, কাছাকাছি সময়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটির মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ করোনা টিকার অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন।
গত ৯ জুলাই ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল, ইন্দোনেশিয়ার করোনা সংক্রমণের এই সাম্প্রতিক উল্লফনে ভয়াবহ চাপের মধ্যে পড়েছে দেশটির ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো।
জাভা, বালি, পাপুয়াসহ বিভিন্ন দ্বিপের অধিকাংশ হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি করার জায়গা না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতালগুলো।
তবে, করোনার সাম্প্রতিক এই উল্লফনে সবচেয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দেশটির বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ জাভা।
হাসপাতালে শয্যা সংকটের পাশাপাশি দ্বীপটিতে দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে অক্সিজেন সংকট। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জাভা দ্বীপের ৬ টি জেলায় অক্সিজেনের মজুত শেষ হয়ে গেছে।
দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে উঠে আসছে আসছে এই সংকটের চিত্র। ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসমূহ ভরে উঠেছে অক্সিজেন ও হাসপাতালে শয্যা সংকট সম্পর্কিত বিভিন্ন পোস্টে।
সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের লকডাউনসহ কঠোর বিধিনিষেধ এবং জনগণের চলাচল অন্তত ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন।
সংবাদ সম্মেলনে সাদিকিন বলেন, ‘আমরা যদি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করি, তাহলে অতিরিক্ত রোগীর চাপে খুব দ্রুত আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’
সূত্র : ব্লুমবার্গ
এসএমডব্লিউ