নজরদারি প্রযুক্তির বিক্রি-ব্যবহার বন্ধের আহ্বান
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি জোটের ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বদৌলতে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলা পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ঘটনা ফাঁসের পর এমন প্রযুক্তি বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধের আহ্বান উঠতে শুরু করেছে।
ইসরায়েলি সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি এনএসও এর তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনীতিকদের ফোনে আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস হওয়ায় এমন দাবি তুলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বিজ্ঞাপন
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ এসব মানুষের ফোনে রাষ্ট্রীয়ভাবে আড়িপাতার মতো ঘটনাগুলো সামনে আসার পর এসব নজরদারি প্রযুক্তির বিক্রি ও ব্যবহারের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া জরুরি।
সংস্থাটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘এভাবে আড়িপাতার ঘটনা বৈশ্বিক মানবাধিকার সংকটকেই তুলে ধরেছে।’ ‘দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত স্পাইওয়ার প্রযুক্তি শিল্প বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষার ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে’ বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিতে সংস্থাটির মহাপরিচালক অ্যাগনেস ক্যাল্লামার্ড বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটাতে কেবল অবৈধভাবে লক্ষ্যবস্তু করা ব্যক্তিদের ঝুঁকি ও ক্ষতিকেই উন্মোচিত করে না, বৈশ্বিক মানবাধিকার এবং ডিজিটাল পরিবেশের সুরক্ষার ওপর চূড়ান্ত অস্থিতিশীল পরিণতি তৈরি করবে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাপারিচালক ওই বিবৃতিতে আরও বলেছেন ইসারয়েলের এনএসও গ্রুপ কেবল একটি সংস্থা। কিন্তু এটা তো বিপজ্জনক এক শিল্প যা বৈধভাবে দীর্ঘকাল ধরে পরিচালিত হয়েছে এবং এটা আর কোনোভাবে চালিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।’
এসব প্রযুক্তি বিক্রি ও এর ব্যবহার বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘এখন আমাদের জরুরিভিত্তিতে সাইবার নজরদারির এই শিল্পের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা এবং এই শিল্পের ওপর আরও বেশি তদারকি করা দরকার।’
স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতার ঘটনার প্রমাণ হাতে এসেছিল প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হাতে। পরে তারা বড় বড় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে জানায়।
ফাঁস হওয়া এক ডেটাবেজে ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। ওই ফোন নাম্বারগুলো খতিয়ে দেখেছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ওই গণমাধ্যম জোটটি। ধারণা করা হচ্ছে, এনএসওর গ্রাহক সরকারগুলোর লক্ষ্যবস্তু ছিল ওই নম্বরগুলো।
পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বের অন্ততপক্ষে ৪৫টি দেশে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়িপাতা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়েছে।
ইসরায়েলের সাবেক সাইবার গোয়েন্দাদের হাত ধরে ২০১০ সালে গড়ে ওঠা এনএসও গ্রুপ আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলছে, তারা যাদের কাছে এই প্রযুক্তি বিক্রি করে তাদের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ওপর তাদের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই।
এএস