হার্ড ইমিউনিটি এখনও অনেক দূরে: ডব্লিউএইচও
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও চলতি ২০২১ সালের মধ্যে এই রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের দেহে প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে ওঠা বা হার্ড ইউমিউনিটি অর্জন অসম্ভব বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও।
সোমবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর শীর্ষ বিজ্ঞানী ড. সৌম্য স্বামীনাথন জানান, যদিও সম্প্রতি গত কয়েক সপ্তাহে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও, কিন্তু এই রোগের সংক্রমণ রোধ করতে আরও কতদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে- তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ ঠেকাতে যদিও বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এর মধ্যে দিয়ে চলতি বছরই ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মধ্যে এ রোগের প্রতিরোধী ক্ষমতা বা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে। কিছু এলাকায় বা দেশের মানুষদের মধ্যে প্রতিরোধী ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে উঠলেও যদি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের প্রসঙ্গে বলতে হয়, সেক্ষেত্রে আমরা বলব হার্ড ইমিউনিটি অর্জন এখনো অনেক দূরের ব্যাপার।’
সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালকের উপদেষ্টা ড. ব্রুস আইলওয়ার্ড জানান, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে ‘কোভ্যাক্স’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা, অর্থ ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য সহযোগিতার অভাবে এই প্রকল্প কতখানি সফল হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সম্পদশালী দেশগুলোকে এই প্রকল্পে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডব্লিউএইচও একা এই প্রকল্প সফল করতে পারবে না।’
বিজ্ঞানীরা যদিও বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য একটি দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন, তবে সম্প্রতি করোনার নতুন ধরন শনাক্তের প্রেক্ষিতে এই ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন অনেকেই।
তবে সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, মূলত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনের শনাক্তের পরিবর্তে বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় শিথিলতাকেই দায়ী করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনা প্রতিরোধে ডব্লিউএইচওর টেকটিক্যাল টিমের প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ এ বিষয়ে বলেন, ‘সম্প্রতি পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য করোনার নতুন ধরন প্রধানভাবে দায়ী নয়; সংক্রমণ বেড়ে গেছে তার কারণ, আমরা গত গ্রীষ্ম থেকে শীত পর্যন্ত…বিশেষ করে ক্রিসমাস এবং নতুন বছর উদযাপণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করিনি।’
২০১৯ সালের শেষে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস, যার নাম দেয়া হয় নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস। পরে উহান থেকে নতুন করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং মহামারীর রূপ পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, মারা গেছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।
সূত্র: সিটিভি নিউজ
এসএমডব্লিউ