যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তুরস্কের গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব আদনান ওকতারকে ১ হাজার ৭৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত।

আদনান ওকতার ‘চ্যানেল এ নাইন’ নামে তুরস্কের একটি টিভি চ্যানেলের মালিক। নিজ মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল ছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ইসলামী টক শো সঞ্চালনা করতেন তিনি।  

টেলিভিশন চ্যানেলে ইসলামধর্মের সৃষ্টিতত্ত্ব এবং রক্ষণশীল মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করলেও এর বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে বেশিরভাগ সময়ই তিনি স্বল্পবসনা তরুনীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন; তাদের সম্বোধন করতে ‘বিড়ালছানা’(kitten) বলে।

যৌন নির্যাতন ও আর্থিক প্রতারণামূলক অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৬৪ বছর বয়স্ক এই মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে ২০১৮ সালে গ্রেফতার করে ইস্তাম্বুল পুলিশ।

আর্থিক প্রতারণায় তাকে সহযোগীতার অভিযোগে তার বন্ধু এবং টেলিভিশন সহকর্মীসহ প্রায় ২০০ ব্যাক্তিকেও তখন পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। 

যৌন নির্যাতন, অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুনীদের ধর্ষণ, আর্থিক প্রতারণা ও জাল জালিয়াতি, রাজনৈতিক ও সেনাবাহিনীতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ওকতারকে ১ হাজার ৭৫ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছেন ইস্তাম্বুল আদালত।

আর এসব কাজে সহযোগিতার অভিযোগে ওকতারের টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল এ নাইন’ এর দুই নির্বাহী তারকান ইয়াভাসকে ২১১ বছর এবং ওকতার বাবুনাকে ১৮৬ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

তুরস্কের আনাদোলু নিউজ এজেন্সির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে তুরস্কের মার্কিনপন্থী ইসলামী ব্যাক্তিত্ব ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে যে ব্যর্থ বিদ্রোহ ঘটেছিল, তাতে আর্থিক সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে ওকতারের বিরুদ্ধে।

তবে আদালতে বিচার চলার সময় গুলেনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন ওকতার। তার বিরুদ্ধে আনা যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলোকেও ‘শহুরে কল্পকাহিনী’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি।

ওকতারকে সহযোগিতা এবং তার বিভিন্ন আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২৩৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৮ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ওকতারের বিচার শুরু হয়। এক বছরেরও অধিক সময় ধরে চলা এই বিচারকাজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো। আদালতে তার ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোর রগরগে বর্ণনা নিয়মিতই প্রকাশিত হয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোতে।  

আদালতে ওকতার বলেছেন, তার প্রায় ১ হাজার প্রেমিকা রয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার হৃদয়ে নারীদের জন্য অশেষ প্রেম রয়েছে। প্রেম একটি মানবিক গুন; এবং ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। একজন ব্যক্তি যদি প্রকৃত মুসলিম হতে চান, অবশ্যই তার একটি প্রেমপূর্ণ হৃদয় থাকতে হবে।’

আদালতে তিনি আরো বলেন, ‘আমার শারীরিক সক্ষমতা দুর্দান্ত পর্যায়ের।’

১৯৯০ সালে টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠান সঞ্চালণা করে তুরস্কের গণমাধ্যমের নজর কাড়েন ওকতার। এরপর ২০১১ সালে চ্যানেল এ নাইন নামে নিজেই খুলে বসেন একটি অনলাইন টিভি চ্যানেল।

বিতর্কিত বিভিন্ন কন্টেন্ট প্রচারের অভিযোগে কয়েকবার জারিমানা দেয়া এই চ্যানেলটি তাকে গ্রেফতারের পর বন্ধ করে দেয় তুরস্ক পুলিশ।

ওকতারের নির্যাতনের শিকার এক নারী আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে জানিয়েছেন, তিনিসহ আরো বেশ কয়েকজন নারীকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন ওকতার।

ওই নারী আরো জানান, ধর্ষণের পর তাদের জন্মনিরোধ ওষুধ খেতে বাধ্য করতেন ওকতার।

ওকাতারকে গ্রেফতারে ইস্তাম্বুলে তার বাড়িতে অভিযান চালানো সময় সেখান থেকে ৬৯ হাজার জন্মনিরোধ বিল জব্দ করে তুরস্কের পুলিশ। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে আদালতে বলেছেন, চর্মরোগের জন্য এই ওষুধগুলো কেনা হয়েছিল।  

২০১৮ সালে ওকতারকে গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে তার ইস্তাম্বুলের বাড়িটি ধ্বংস করে দেয়া হয়, পাশাপাশি তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এসএমডব্লিউ