ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুই রাজ্যে আসাম ও মিজোরামের মধ্যকার চলমান সংকট আরও জটিল রূপ ধারণ করেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে কোনো কাজ তো হয়ইনি বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। একে-অপরের প্রতিবেশি রাজ্য হলেও মিজোরামে প্রবেশে আসামের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাজ্যটির (আসাম) সরকার।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) আসামের নাগরিকদের জন্য নতুন একটি নির্দেশনা জারি করে করে রাজ্যটির সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্যের কোনো নাগরিক যেন এখন মিজোরামে না যান।

এছাড়া বিভিন্ন কারণে আসামের যে সকল নাগরিক মিজোরামে বসবাস করেন, তাদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুই রাজ্যের মধ্যবর্তী সীমানা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিজোরাম থেকে আসামে কোনো গাড়ি ঢুকলে ‘অবৈধ মাদকের সন্ধানে’ চালানো হচ্ছে কড়া তল্লাশি।

আসাম রাজ্যের প্রশাসনের বক্তব্য, আসামের মাধ্যমে বেআইনি মাদক দেশের ভেতর এবং বিদেশে পাচার করে মিজোরাম। সে কারণেই মিজোরাম থেকে আসা সমস্ত গাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

রাজ্যটি জানিয়েছে, গত দুই মাসে মিজোরামের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ৯১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সবই মাদক সংক্রান্ত। এসময় মামলায় দেড় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিজোরাম যাতে মাদক ব্যবসায় আসামকে আর ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্যই নতুন এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আসামের এই নতুন পদক্ষেপ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি মিজোরাম। তবে আসামের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে সরব হয়েছেন মিজোরামের নাগরিকরা। তাদের দাবি, মিজোরামের মানুষকে বিপাকে ফেলতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে আসাম। এর ফলে দুই রাজ্যের মধ্যে শত্রুতা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

মিজোরামের রাজ্য প্রশাসন অবশ্য আগেই জানিয়েছিল যে, আসাম যেভাবে সীমানা বন্ধ করে দিচ্ছে, তা অনভিপ্রেত। দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপের পরেও আসাম যে ব্যবহার করছে, তা অনুচিত।

মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তার বন্ধু। এ বিষয়ে তাদের কথাও হয়েছে। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি, আসামের নতুন নীতিতেই তা স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, গত সোমবার ভারতের দুই রাজ্য আসাম এবং মিজোরামের পুলিশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে আসামের ৬ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। সীমানার অধিকার নিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যে ওই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। এরপর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলেও সেই জটিলতা এখনও কাটেনি।

দুই রাজ্যের পুলিশ বলছে, আসাম ও মিজোরামের সীমান্তবর্তী লায়লাপুর অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে উভয় রাজ্য। মিজোরামের বাসিন্দারা লায়লাপুরের জমি অবৈধভাবে দখল ও আসামের স্থানীয় অধিবাসীদের উচ্ছেদ করছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ আসে আসাম রাজ্য প্রশাসনে।

সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসাম রাজ্য প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা লায়লাপুর সীমান্তে যান। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করেন মিজোরামের স্থানীয় বাসিন্দারা। একপর্যায়ে উভয় রাজ্যের পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন আসামের ৬ পুলিশ সদস্য।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সীমানা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে দুই রাজ্যের পুলিশের লড়াই ও মৃত্যুর ঘটনা সেই ১৯৮৫ সালের পর আবার হলো। তখন সীমানা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই রাজ্য আসাম ও নাগাল্যান্ড। আর এবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াল আসাম ও মিজোরাম। বস্তুত আসামের সঙ্গে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশের সীমানা নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক ও বিরোধ রয়েছে।

টিএম