জেনে নিন করোনার কোন টিকার কার্যকারিতা কত?
লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া করোনাভাইরাস মহামারির অবসানে বিশ্বজুড়ে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪৩টি দেশের মানুশের শরীরে ২ কোটি ৯০ লাখ ডোজ করোনা টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বের শত কোটি মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়াই আধুনিক বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসের ২৩০টিরও বেশি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। শরীরে অ্যান্টিবডি এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইকারী কোষকে উসকে দিতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে এসব ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছয়টি ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে এবং আরও কয়েকটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিছু দেশে ভ্যাকসিনের প্রয়োগও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
কোন ভ্যাকসিনের অগ্রগতি কতদূর?
বিজ্ঞাপন
♦ বায়োএনটেক/ফাইজার
• জার্মানি/যুক্তরাষ্ট্র
• তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুযায়ী কার্যকারিতা ৯৫%
জার্মানির বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় এটি প্রথম অনুমোদন পায়।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
এমআরএনএ প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তিতে মূলত মানব দেহের কোষে প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা থাকে; যা করোনাভাইরাসের কিছু অংশকে অনুকরণ করে। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে কার্যকর করতে উৎসাহিত করে এ নির্দেশনা। এর পাশাপাশি শরীরকে ভাইরাসপ্রতিরোধী হিসেবে গড়ে তোলে।
• মাত্রা: দুই ডোজ
♦ অনুমোদন পেল যেসব দেশে
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, বাহরাইন, সৌদি আরব এবং বিশ্বের আরও ৪০টির বেশি দেশে। ফোসুন ফার্মার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চীনেও এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলমান রয়েছে।
♦ অনুমোদন কবে, কোথায়?
• ডিসেম্বর ১: যুক্তরাজ্যে
• ডিসেম্বর ১২: যুক্তরাষ্ট্রে
• ডিসেম্বর ২২: ইউরোপীয় ইউনিয়নে
• ডিসেম্বর ৩১: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়
♦ উৎপাদন
২০২০ সালেই সাড়ে চার কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করেছে বায়োএনটেক এবং ফাইজার। চলতি বছর ২০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জার্মানির মারবার্গ, ইদার-ওবারস্টেইন, মেইনজ, বেলজিয়ামের পারস এবং মিশিগানের কালামাজোতে উৎপাদিত হবে এই ভ্যাকসিন।
♦ বিশ্বজুড়ে বণ্টন
ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং জাপানে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে। ফোসুন ফার্মার সঙ্গে যৌথ অংশদারিত্বের ভিত্তিতে চীনে অতিরিক্ত ১০ কোটি ডোজ সরবরাহ করবে বায়োএনটেক।
♦ মজুদের জন্য যা দরকার
এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণে দরকার মাইনাস ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তবে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা টিকে থাকবে মাত্র পাঁচদিন।
♦ মডার্না
• যুক্তরাষ্ট্র
• তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ কার্যকর
এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে মডার্না। যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে মডার্নার ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে। বোস্টনভিত্তিক এই বায়োটেক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে; যা বায়োএনটেক এবং ফাইজারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
• এমআরএনএ
• মাত্রা: দুই ডোজ
♦ যেসব দেশে অনুমোদন
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুমোদন পেয়েছে এই ভ্যাকসিন। তবে কানাডা, ইসরায়েল, সিঙ্গাপুর এবং সুইজারল্যান্ডে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
♦ অনুমোদন কবে, কোথায়?
• ডিসেম্বর ১৯: যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন
• ডিসেম্বর ২৩: অনুমোদন পায় কানাডায়
♦ উৎপাদন
চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড এবং স্পেনে ৬০ থেকে ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মডার্না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে।
♦ বিশ্বজুড়ে বণ্টন
বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে এই ভ্যাকসিন শিগগিরই পাওয়া যেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
♦ মজুদের জন্য দরকার
মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পরিবহন করতে হবে। তবে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হলে ভ্যাকসিনটি কার্যকর থাকবে ৩০ দিন।
♦ অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
• যুক্তরাজ্য
• তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় গড় কার্যকরের হার ৭০ শতাংশ
ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ভ্যাকসিন সস্তায় বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একেবারে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই ভ্যাকসিন সংক্ষরণের সুবিধা থাকায় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ আশাবাদী। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন পায়।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
• অ্যাডেনোভাইরাস
• মাত্রা: সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ
♦ যেসব দেশে অনুমোদন
প্রাথমিক এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পর্যালোচনার পর যুক্তরাজ্য ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রেও ভ্যাকসিনটির পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান রয়েছে এবং চলতি বছরের শেষের দিকে এটি অনুমোদন পেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
♦ অনুমোদন কবে, কোথায়?
• ডিসেম্বর ২৭: যুক্তরাজ্যে প্রয়োগের অনুমোদন
• জানুয়ারি ৩: অনুমোদন দেয় আর্জেন্টিনা এবং ভারত
• মধ্য-জানুয়ারি: পরীক্ষার ফল পর্যালোচনার পর অনুমোদন দিতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
• ২০২১: যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনের প্রত্যাশা
♦ উৎপাদন
চলতি বছরে যুক্তরাজ্য, ভারত, ব্রাজিলসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে ৩০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।
♦ বিশ্বজুড়ে বণ্টন
বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে অনুমোদন। সস্তা এবং মজুদের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রা দরকার হওয়ায় বিশ্বের উন্নয়নশীল বেশিরভাগ দেশে এই ভ্যাকসিন অনুমোদন পেতে পারে। একেবারে নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অঙ্গীকার করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
♦ মজুদের জন্য যা দরকার
২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ সুবিধা রয়েছে এই ভ্যাকসিনের।
♦ গামালিয়া ইনস্টিটিউট
• রাশিয়া
• পরীক্ষার অন্তঃবর্তী ফলে ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে দাবি করে গত আগস্টে ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ এর অনুমোদন দেয়। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরুর আগেই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়ায় এর সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
• অ্যাডেনোভাইরাস
♦ মাত্রা
• দুই ডোজ
♦ অনুমোদন
প্রাথমিকভাবে রাশিয়া অনুমোদন দেয়ায় সমালোচকরা এই ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত ডিসেম্বরে বেলারুশ এবং আর্জেন্টিনাতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে এই ভ্যাকসিন। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা এখনও চলমান রয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির চিকিৎসক এবং শিক্ষকদের শরীরে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
♦ উৎপাদন
রাশিয়া বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রাথমিকভাবে ১২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চাহিদা পাওয়া গেছে। তবে এই চাহিদা ২৪০ কোটিতে উন্নীত হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটি। ভ্যাকসিনের চাহিদার কারণে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায় মস্কো।
♦ বিশ্বজুড়ে বণ্টন
• রাশিয়াজুড়ে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলো, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হাঙ্গেরি, সৌদি আরব এবং লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে শিগগিরই বিতরণ শুরু হবে।
♦ সংরক্ষণ
• ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এই তাপমাত্রায় কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য সংরক্ষণ করা যায় ভ্যাকসিনটি।
♦ ক্যানসিনো
• চীন
♦ কার্যকারিতার হার
মেক্সিকো, রাশিয়া এবং পাকিস্তানের এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালিয়েছে ক্যানসিনো। হংকংভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আনার ঘোষণা দেয়ার পর বাজারে শেয়ারের মূল্য প্রায় ৪৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
• অ্যাডিনোভাইরাস
• মাত্রা : এক ডোজ
♦ অনুমোদন
চীনে সীমিত ব্যবহারের জন্য গত জুনে অনুমোদন পায়। যদিও এই ভ্যাকসিনের শেষ ধাপের পরীক্ষা রাশিয়া, মেক্সিকো এবং পাকিস্তানে চলমান রয়েছে।
♦ উৎপাদন
চলতি বছরে চীনে এই ভ্যাকসিনের ৩০ কোটি ডোজ উৎপাদিত হতে পারে।
♦ বণ্টন
• চীনজুড়ে এবং মেক্সিকোতে বিতরণ শুরুর অপেক্ষা
♦ সংরক্ষণের উপায়
২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবে এর কার্যকারিতার মেয়াদের ব্যাপারে কোনও তথ্য এখনও জানায়নি ক্যানসিনো।
♦ সিনোফার্ম-১
• চীন
♦ কার্যকারিতার হার
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ অথবা সিনোফার্ম দু’টি ভ্যাকসিন তৈরি করছে। এর মধ্যে প্রথমটি তৈরি হচ্ছে উহান ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। সীমিত প্রয়োগের অনুমতি দিয়ে ইতোমধ্যে চীনজুড়ে এই ভ্যাকসিনের বিতরণ শুরু হয়েছে। গত নভেম্বরে সিনোফার্ম জানায়, প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনটির দু’টি ডোজের একটি দেয়া হয়েছে।
• ভ্যাকসিনের মাত্রা: দু’টি ডোজ
♦ অনুমোদন
গত বছর সীমিত ব্যবহারের জন্য ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দেয় চীন। শিগগিরই ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, পেরু, মরক্কো, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, মিসর এবং জর্ডানে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান রয়েছে।
♦ উৎপাদন
চলতি বছরে চীনে এই ভ্যাকসিনের একশ কোটির বেশি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
♦ বণ্টন
চীন ছাড়াও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় সিনোফার্মের এই ভ্যাকসিনের বিতরণ শুরু হবে।
♦ সংরক্ষণের জন্য যা দরকার
• ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণের জন্য ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার দরকার হয়। তবে এই কার্যকারিতার মেয়াদ কতদিন থাকবে; সেটি এখনও জানা যায়নি।
♦ সিনোফার্ম-২
• চীন
বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের যৌথভাবে তৈরি দ্বিতীয় ভ্যাকসিন তৈরি করছে সিনোফার্ম। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই ভ্যাকসিনটি গত ডিসেম্বরে অনুমোদন পায়। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অন্তঃবর্তী ফলে এটি ৭৯ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
• করোনার নিস্ক্রিয় ভাইরাস থেকে তৈরি
• মাত্রা: দুই ডোজ
♦ অনুমোদন
অনুমোদনের জন্য গত নভেম্বরে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়। ৩০ ডিসেম্বর ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় চীন। পেরু, মরক্কো, আর্জেন্টিনা, মিসর এবং জর্ডানে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান রয়েছে।
♦ কার্যকারিতার হার
• সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালানো তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অন্তঃবর্তী ফলে ভ্যাকসিনটির ৭৯ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে।
♦ কবে, কোথায় অনুমোদন
• ডিসেম্বর ৯: সংযুক্ত আরব আমিরাত ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দেয়।
• ডিসেম্বর ১৪: বাহরাইনে অনুমোদন
• ডিসেম্বর ৩০: অনুমোদন দেয় চীন
♦ উৎপাদন
চলতি বছরেই ১০০ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চীন।
♦ বণ্টন
চীন ছাড়াও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় সিনোফার্মের এই ভ্যাকসিনের বিতরণ শুরু হবে।
♦ সংরক্ষণের জন্য যা দরকার
• ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণের জন্য ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার দরকার হয়। তবে এর কার্যকারিতার মেয়াদ কতদিন থাকবে; সেটি এখনও জানা যায়নি।
♦ সিনোভ্যাক
• চীন
♦ কার্যকারিতার হার
চীনে এবং বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে সিনোভ্যাক বায়োটেক। চীনের অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতো এটিও দেশটিতে প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
নিস্ক্রিয় ভাইরাস থেকে তৈরি
• মাত্রা : দুই ডোজ
♦ অনুমোদন : চীনে সীমিত পরিসরে প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে এই ভ্যাকসিন। ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান রয়েছে। ভ্যাকসিনটি চলতি বছরেই চীনের অনুমোদন পেতে পারে।
♦ উৎপাদন
চীনে চলতি বছরে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
♦ বণ্টন
চীন, ব্রাজিল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় ভ্যাকসিনটি বিতরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
♦ সংরক্ষণের জন্য যা দরকার
• ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণের জন্য ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার দরকার। তবে এর কার্যকারিতার মেয়াদ কতদিন থাকবে; সেটি এখনও জানা যায়নি।
♦ ভারত বায়োটেক
• ভারত
♦ কার্যকারিতার হার
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সঙ্গে সমন্বয় করে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক। গত বছর ভারতের প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পৌঁছায় এটি। চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটি জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভ্যাকসিনটির অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট স্বচ্ছতা অনুসরণ করা হয়নি।
♦ ভ্যাকসিনের মাত্রা : দুই ডোজ
♦ অনুমোদন
৩ জানুয়ারি ভারতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পায় এই ভ্যাকসিন।
♦ উৎপাদন
চলতি বছরে ৩০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা ৫০ কোটিতে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
♦ সংরক্ষণের জন্য যা দরকার
• ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণের জন্য ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার দরকার। তবে এর কার্যকারিতার মেয়াদ কতদিন থাকবে; সেটি এখনও জানা যায়নি।
♦ জনসন অ্যান্ড জনসন
• যুক্তরাষ্ট্র
♦ কার্যকারিতার হার
জনসনের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রে চলমান রয়েছে। চলতি মাসেই এই পরীক্ষার অন্তঃবর্তী ফল মিলতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এছাড়াও নিউ জার্সিভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে শেষ ধাপের পরীক্ষায় দু’টি ডোজ প্রয়োগ করবে।
♦ ভ্যাকসিনের ধরন
• অ্যাডেনোভাইরাস
• মাত্রা: এক ডোজ
♦ অনুমোদন কবে, কোথায়?
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরীক্ষার ফল পর্যালোচনাধীন রয়েছে। তবে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল এখনও কোথাও জমা দেয়া হয়নি। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল ইতিবাচক এলে আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ওষুধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
♦ উৎপাদন
• যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকায় চলতি বছরে একশ কোটি ডোজ উৎপাদনের প্রত্যাশা।
♦ বিশ্বজুড়ে বণ্টন
• অনুমোদন পেলে শিগগিরই বিশ্বজুড়ে বিতরণ শুরু হবে এই ভ্যাকসিনের।
♦ সংরক্ষণের জন্য যা দরকার
২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ভ্যাকসিন তিন মাসের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। তবে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুই বছরের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে।
করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি
• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে
• ১১ মার্চ ‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
করোনার বৈশ্বিক চিত্র
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে এই ভাইরাস বিশ্বের ২১৮টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৬ হাজার।
করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজারের বেশি এবং প্রাণ গেছে ৩ লাখ ৮৫ মানুষের। এরপরই আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত; দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার।
সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ব্লুমবার্গ, ওয়ার্ল্ডোমিটারস।
এসএস