দিল্লিতে দলিত শিশুকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা
দিল্লিতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও বিক্ষোভের প্রস্তুতি
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নয় বছরের একটি বাচ্চা মেয়েকে শ্মশানঘাটে ধর্ষণ করার পর ধর্ষণকারীরা জোর করে তার মরদেহ জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবারের এক অনলাইন প্রতিবেদনে রোমহর্ষক এই খবর জানিয়েছে বিবিসি।
নিহতের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে ঘটনার প্রায় চব্বিশ ঘন্টা পর দিল্লি পুলিশ অভিযুক্ত এক পুরোহিত ও তার তিন সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দিল্লি সরকার।
বিজ্ঞাপন
তবে বিভিন্ন দলিত সংগঠন বলছে, ধর্ষণের শিকার শিশুটি যেহেতু দলিত বা নিম্নবর্ণীয় সমাজের তাই এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে তেমন জোরালো প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির সেনানিবাস এলাকার পাশ ঘেঁষে রয়েছে একটি বাল্মিকী বস্তিতে ঘটেছে এই ঘটনা। যে নৃশংস ঘটনার বিরুদ্ধে ওই এলাকার বাসিন্দারা সোমবার থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন, সেটি ঘটেছিল তার আগের দিন রাতেই।
বিজ্ঞাপন
— The Shudra (@TheShudra) August 3, 2021
নিহত শিশুর মা বলছিলেন, ‘আমরা সেদিন গ্রামে গিয়েছিলাম আর আমাদের বাচ্চা শ্মশানঘাটের ওয়াটার কুলার থেকে খাবার জল নিতে গিয়েছিল। শ্মশানের মন্দিরের পুরোহিত বা পন্ডিতজি আমাদের ফোন করে হঠাৎ খবর দেয়, কুলার থেকে জল নিতে গিয়ে আমাদের মেয়ে নাকি কারেন্ট খেয়ে মারা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাতেই তাড়াহুড়ো করে সৎকার করা হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ‘পন্ডিতজি’ আর ওর দলবল আমাদের মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে।’
রাধেশ্যাম নামে মূল অভিযুক্ত ওই পুরোহিত সোমবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আটক হয়েছেন লক্ষ্মীনারায়ণ, কুলদীপ ও সালিম নামে তার তিন সঙ্গীকে। তাদের নামে বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা, ভয় দেখানো ও প্রমাণ লোপাট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুরানা নাঙ্গাল নামে ওই এলাকায় অবশ্য এখনও পুলিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র। অনেকেই বলছিলেন, চার জন অভিযুক্তকে পুলিশই জিপে করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে এবং তারা গরিব ও বাল্মিকী বলেই বিচার পাচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, নিহত মেয়েটির মা-বাবাকে থানার ভেতরেই উল্টে মারধর করা হয়েছিল।
— Bezwada Wilson (@BezwadaWilson) August 2, 2021
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘পুলিশের মদতেই ওই শ্মশানঘাটে বহুদিন ধরে চলছিল জুয়া, মদ্যপান ও নানা অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া।’ এই মুহুর্তে অভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ড ছাড়া তারা যে কোনও শাস্তিতেই সন্তুষ্ট হবেন না বাল্মিকীরা সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
পুরোহিত ও তার সঙ্গীদের ফাঁসির দাবিতে পুরানা নাঙ্গাল সরব হলেও দিল্লি সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী রাজেন্দ্র গৌতম ওই বস্তিতে গিয়ে কথা দিয়ে এসেছেন দোষীদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি হবে।
গৌতম বলেছেন, ‘দেশের রাজধানীতে এমন ঘটনা ভাবাই যায় না। উত্তরপ্রদেশের দেহাত অঞ্চলে শোনা যায় ভিক্টিমের পরিবারকেই ভয় দেখিয়ে বয়ান বদলাতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু দিল্লিতেও কেন এ জিনিস ঘটবে?’
তিনি বলেন, ‘যদিও দিল্লিতে আইন-শৃঙ্খলা আর পুলিশ রাজ্য সরকারের হাতে নেই, তবু নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর দোষীরা যাতে সাজা পায় আমরা তা নিশ্চিত করব।’
— Sandeep Singh (@ActivistSandeep) August 2, 2021
‘নিম্নবর্ণের বলেই জোরালো প্রতিবাদ নেই’
তবে দলিত সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলছে, এমন পাশবিক ঘটনাতেও দিল্লির প্রতিবাদ স্তিমিত কেন। ভীম আর্মির নেতা হিমাংশু বাল্মিকী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘এ দেশে একটা গরু মরলেও মিডিয়া থেকে আরএসএস হইচই শুরু করে দেয়, কিন্তু এখন তারা চুপ কেন ‘
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত মুসলিম হলে বিজেপি এতক্ষণে কী করত ভাবুন তো? দশ মাইল দূরে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছে, কারও মুখে একটা আওয়াজ পর্যন্ত নেই। এই মেয়েটি দলিত না হলে সব বড় দলের নেতাদের তো এখানে এসে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়ার হিড়িক পড়ে যেত! আমাদের বস্তিতে আসতে ওনাদের কী নাকে দুর্গন্ধ লাগে?’
প্রায় নয় বছর আগে দিল্লিতে ‘নির্ভয়াকাণ্ড’ নামে পরিচিত ধর্ষণ মামলায় নিহত মেয়েটি যে উচ্চবর্ণের ছিল এবং গোটা দিল্লি যে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল, দলিত নেতারা সখেদে সেটাও আজ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
এএস