প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির বিদায়ী এই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদ বাকি আছে আর মাত্র ছয়দিন। আর তাই কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হওয়া ট্রাম্পের ভাগ্যে এখন কী ঘটবে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

আগামী ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যাপিটল ভবনের বাইরে শপথ নেওয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। এই সময়ের মধ্যে কী ট্রাম্পকে সিনেটে ইমপিচ করার মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে চূড়ান্তভাবে বিদায় করা যাবে?

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে- প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হলেও এ বিষয়ে সিনেটে ভোটাভুটি কবে হবে?

ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের হাতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম দফা অভিশংসনের পর ক্ষমতাচ্যুতির হাত থেকে ট্রাম্পকে বাঁচিয়েছিল সিনেট।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের ভোটাভুটি সম্পন্ন হওয়ার পর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠাতে হয়। সিনেটে পৌঁছানোর পরপরই সেখানে সেটা (অভিশংসন প্রক্রিয়া) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়।

এই ধারা অনুসরণ করে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ শিগগিরিই সিনেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাবে। পরে সিনেট অধিবেশন বসলে, ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানো ইস্যুতে ভোটাভুটি হতে বাধ্য, কোনো বিকল্প নেই।

হাতে সময় আছে ছয় দিন; তাহলে সিনেট অধিবেশন কবে বসবে? মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কী ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে পারবে ডেমোক্র্যাটরা?

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, সিনেটের অধিবেশন আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মূলতবি রয়েছে। এর আগে সিনেট অধিবেশন বসার সম্ভাবনা কম।

তবে এই কথা ডেমোক্র্যাটরা মানতে রাজি নন। তারা চান ১৯ জানুয়ারির আগেই সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে সেখানে ট্রাম্পের বিষয়ে ফয়সালা করতে।

ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অভিশংসনের পক্ষে সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হবে। সিনেটের ১০০ জন সদস্যই যদি উপস্থিত থাকে, তাহলে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কমপক্ষে ১৭ রিপাবলিকান সিনেটরকে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিতে হবে।

আর তাই ট্রাম্পের অভিশংসনের বিষয়টি ‘জরুরি’ বিবেচনা করে বিশেষ অধিবেশন ডাকতে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ মাককোনেলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর চাক শুমার।

কিন্তু সিনেটর মিচ মাককোনেলের দপ্তর থেকে বুধবার জানানো হয়েছে, জরুরি অধিবেশন ডাকার ব্যাপারে চাক শুমারের একটি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসনের পর এক বিবৃতিতে মিচ ম্যাককোনেল জানিয়েছেন, বাইডেনের শপথ গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিনেট কোনো ব্যবস্থা নেবে না।

ফলে ট্রাম্প হয়তো তার ক্ষমতার শেষ দিনগুলো হোয়াইট হাউসেই কাটাতে পারবেন। তবে তার জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে- সিনেটে একবার অভিশংসনের প্রস্তাব পৌঁছালে তা নিয়ে ভোটাভুটি হতে বাধ্য।

ফলে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পরই হয়তো সিনেটে অভিশংসনের মুখে পড়বেন ট্রাম্প। আর সিনেটে যদি ট্রাম্প অভিশংসিত হয়েই যান তাহলে তিনি আর কখনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন ট্রাম্প।

তবে কী ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পরই চূড়ান্তভাবে অভিশংসিত হবেন ট্রাম্প? হয়তো হবেন না, আবার হতেও পারেন।

আর যদি ডেমোক্র্যাটরা সফল হয়, তাহলে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হয়ে নাম ওঠানোর পাশাপাশি ইতিহাসের পাতায় ট্রাম্পের নাম আরও একটি কারণে লেখা থাকবে। আর তা হচ্ছে- সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসন বা ক্ষমতা থেকে বিদায়ের পর অভিশংসন।

ট্রাম্প যে আর কত রেকর্ড সৃষ্টি করবেন, কেই বা জানে!

সূত্র: রয়টার্স

টিএম