পুরনো দ্বন্দ্ব ভুলে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি বিনিময় করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

গত সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন এরদোয়ান। চিঠিতে গতবছর ফ্রান্সে একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন তিনি।

চলতি সপ্তাহে এরদোয়ানের সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ সেই চিঠিতে ম্যাক্রোঁ এরদোয়ানকে ‘প্রিয় তাইয়্যেপ’ বলে সম্বোধনের পাশাপাশি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে আগ্রহী।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগ্লু শুক্রবার দেশের আঞ্চলিক সংবামাধ্যমগুলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

কাভুসোগ্লু বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তার চিঠিতে ইউরোপের জন্য তুরস্কের গুরুত্বের বিষয়ে আলোকপাত করেছেন এবং তুরস্কের সঙ্গে ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে আলোচনা ও বৈঠকের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’  

চিঠিতে ম্যাক্রোঁ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, সন্ত্রাসবাদ, সিরিয়া-লিবিয়াসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যু এবং দুই দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় উভয়ের অংশিদারীত্ব নিয়ে এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিষয়ে তুরস্কের সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দেশটির ফ্রান্স দূতাবাস চিঠি বিনিময়ের বিষয়টি স্বীকার করলেও দু’ দেশের প্রেসিডেন্টের পত্রালাপে ঠিক কোন বিষয়গুলো প্রাধাণ্য পেয়েছে তা জানাননি।

তবে দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘আমরা উভয় দেশের মধ্যে আরো বন্ধুত্বপূর্ণ, দৃঢ় ও কার্যকর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রত্যাশা করছি।’

ভূমধ্যসাগরে একটি গ্যাসক্ষেত্র খনন করা নিয়ে গতবছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তুরস্কের। যে এলাকায় ওই গ্যাসকূপটির অবস্থান তা অপর একটি ভূমধ্যসাগরীয় দেশ সাইপ্রাসের জলসীমার অন্তর্ভূক্ত বলে দাবি করে সাইপ্রাস।

এরপর সিরিয়া এবং লিবিয়া এবং নাগোরনো-কারাবাখ ইস্যুতে বিতর্কে জড়ায় ফ্রান্স ও তুরস্ক। ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, তুরস্কের অধিবাসীদের জন্য এরদোয়ানের চেয়ে আরো অধিক রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন নেতা প্রয়োজন।

উভয়পক্ষের দ্বন্দ্ব তিক্ততায় রূপ নেয় গত অক্টোবরে, যখন ফ্রান্সে টানা কয়েকটি জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ম্যাক্রোঁ মন্তব্য করেছিলেন, ইসলাম বৈশ্বিকভাবে সংকট সৃষ্টি করছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় মুসলিম বিশ্বে; একাধিক মুসলিমপ্রধাণ দেশ ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের ডাক দেয়।

মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সে সময় সুর মিলিয়ে এরদোয়ান বলেছিলেন, ম্যাক্রোঁ ‘ইসলামোফোবিয়ায়’ ভুগছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। ‘

সূত্র: আলজাজিরা।

এসএমডব্লিউ