প্রথম দিনে টিকায় লক্ষ্যপূরণ হলো না ভারতের
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে এই ভাইরাস প্রতিরোধে যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে; তাতে প্রথমদিন ৩ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা নিয়েছেন এক লাখ ৯১ হাজার জন। শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর দেয়া এক ভাষণে নরেন্দ্র মোদি ভ্যাকসিনের ব্যাপারে দেশের নাগরিকদের মিথ্যা প্রচারণা ও গুজবে কান না দিতে সতর্ক করে দেন। এ সময় করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে প্রাণ হারানো স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসক ও অন্যান্য সম্মুখসারির যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
রাজধানী দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মনিশ কুমারকে প্রথম দেয়ার মাধ্যমে এই টিকাদান কর্মসূচির সূচনা হয় ভারতে।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (এআইআইএমএস) টিকাদান কেন্দ্রে প্রথম টিকা নেন মনিশ কুমার। দেশটিতে করোনাভাইরাসের টিকাদানের জন্য ৩ হাজারের বেশি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিন ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার বলছে, প্রথম দিন তিন লাখের বেশি মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু দিনের শেষ পর্যন্ত এক লাখ ৯১ হাজার মানুষকে এই টিকা দেয়া গেছে।
লক্ষ্যপূরণ না হওয়ার ব্যাখ্যায় দেশটির সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়ে জনগণের মধ্যে যথেষ্ট দ্বিধা ছিল। তবে টিকাদান কর্মসূচি সফল হয়েছে বলে জোর দাবি করছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, টিকা দেয়ার পর এখন পর্যন্ত কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী মনিশ কুমার বলেন, আমার অনেক সহকর্মী ভীত ছিলেন। আমি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে বলেছিলাম, আমাকে প্রথমে টিকা দেয়া হোক। আমার সহকর্মীদের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে, টিকার ব্যাপারে ভীত হওয়ার দরকার নেই। এমনকি আমার স্ত্রীও টিকা নেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম, এটি একটি টিকা মাত্র।
টিকা নেয়ার পর মাকে ফোন করে স্ত্রীকে বলতে বলেছিলাম যে, আমি সুস্থ আছি। আমি নিরাপদ।
ভারতের প্রথম করোনা টিকা নেয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী মনিশ কুমার
দেশটিতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি করোনাবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। প্রথম ধাপে স্বাস্থ্য কর্মী, সম্মুখসারির যোদ্ধাসহ দেশটির তিন কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসের এই টিকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি
• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে
• ১১ মার্চ ‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
এই কর্মসূচিতে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা ‘কোভিশিল্ড’ এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ ব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে করোনা আক্রান্তে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত চলতি বছরের প্রথম ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে এই দু’টি ভ্যাকসিন দেশটির ৩০ কোটি মানুষকে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশটির পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রায় ২৭ কোটি মানুষ এই টিকা পাবেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমি দেশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, করোনা ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ডোজ নেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার কথা ভুলে যাবেন না। বিশেষজ্ঞরা দুই ডোজের মাঝে এক মাসের ব্যবধানের কথা বলেছেন।
করোনার বৈশ্বিক চিত্র
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে।
তখন থেকে এই ভাইরাস বিশ্বের ২১৮টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ কোটি ৪৫ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২০ লাখ ২৩ হাজার।
করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি এবং প্রাণ গেছে ৪ লাখ ২ হাজার মানুষের। এরপরই আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত; দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৫ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার।
ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৩০ জানুয়ারি। এরপর দেশটিতে এই ভাইরাসের বিস্তারের গতি ধীর করতে দফায় দফায় লকডাউন জারি করা হলেও মহামারির ধাক্কা ঠেকানো যায়নি।
এসএস