নাগরিক ও সহযোগীদের প্রত্যাহারে দোহায় বৈঠকে যুক্তরাজ্য
সাইমন গাস, দোহার বৈঠকের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিশ্রুতি মেনে মঙ্গলবার আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন মার্কিন ও ন্যাটো সেনা সদস্যরা। খাতায় কলমে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিক ও সেনা বহর প্রত্যাহার করে নেওয়ার মেয়াদও শেষ হয়েছে।
কিন্তু এখনও যেসব নাগরিক ও সহযোগী আফগান দেশটিতে রয়ে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে চায় ব্রিটেন। কাজটি সহজ এবং জটিলতামুক্ত করতে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে দেশটি।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা সাইমন গাস দোহার সেই বৈঠকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে বার্তাসংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করেছে ব্র্রিটিশ সরকারের একজন মন্ত্রী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মন্ত্রী এএফপিকে বলেন, ‘গাসের মূল দায়িত্ব বা মিশন হলো, আফগানিস্তানে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিক ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করা আফগানদের দ্রুত ও নিরাপদে দেশটি থেকে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি অব্যাহত রাখতে তালেবান নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানো।’
বিজ্ঞাপন
তালেবান জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ এখনও দোহায় অবস্থান করছেন। গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করেছে তালেবান বাহিনী, অন্যদিকে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য বহর, নিজ দেশের নাগরিক ও ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের প্রত্যাহার কাজ ৩১ আগস্ট শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার কাজে সমাপ্তি টানার পর এই প্রথম তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে কোনো দেশ।
নিজ দেশের নাগরিকসহ ন্যাটো বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং ব্রিটেনে আশ্রয়লাভের জন্য প্রয়োজনীয় ও আবশ্যিক শর্তসমূহ পূরণে সক্ষম- এমন অনেক আফগানকে এখনও ফিরিয়ে আনতে পারেনি ব্রিটেন। দেশটির সরকারের আশা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ৩১ আগস্টের পর আরও কয়েকদিন আফগানিস্তানে নিজ দেশের সেনা সদস্যদের মোতায়েন রাখবে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘অক্ষরে অক্ষরে’ তার প্রতিশ্রুতি মেনে চলায় নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে মার্কিন সৈন্যবহর। ফলে, দেশটিতে রয়ে যাওয়া ব্রিটিশ নাগরিক ও সহযোগী আফগানদের জীবন এখন অনেকটাই নির্ভর করছে তালেবান বাহিনীর দয়ার ওপর।
তালেবান বাহিনী অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ৩১ আগস্টের পরও নিজ দেশের নাগরিক ও সহযোগী আফগানদের প্রত্যাহার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তালেবান বাহিনী কোনো বাধা দেবে না।
গত শনিবার ব্রিটিশ সেনাসদস্যদের নিয়ে রাজধানী কাবুল ত্যাগ করে যুক্তরাজ্যের শেষ উড়োজাহাজটি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী,এ পর্যন্ত নিজ দেশের নাগরিকসহ ১৫ হাজারের বেশি মানুষকে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে ব্রিটেন।
তবে এই সময়সীমার মধ্যে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া যেত উল্লেখ করে এএফপিকে যুক্তরাজ্যের ওই মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আফগানিস্তান থেকে আরও ৮০০ থেকে ১ হাজার মানুষকে নিরাপদে নেওয়া সম্ভব ছিল।’
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনও আফগানিস্তানে ব্রিটেনের নাগরিক ও দেশটির সেনাবাহিনীর সাবেক সহযোগী আফগান রয়ে গেছেন এবং সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটি হবে কয়েকশ।
তালেবান শাসনাধীনে স্বাভাবিকভাবেই চরম নিরাপত্তা সংকটে ভুগছেন তারা। প্রত্যাহার কর্মসূচির ধীরগতির জন্য ইতোমধ্যে তোপের মুখে পড়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
কঠোর সমালোচনা চলছে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবেরও, যিনি আফগানিস্তানের সংকট চলার সময় ছুটি কাটাচ্ছিলেন। এ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের আইনসভা হাউস অব কমন্সে তার কঠোর সমালোচনা করেছে দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টি।
সূত্র : এএফপি
এসএমডব্লিউ