জো বাইডেনের শপথে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সৈন্যদের নিয়ে ভয়
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সতর্ক অবস্থায় সৈন্যরা
নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বুধবারের শপথ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অনেকেই হুমকি তৈরি করতে পারেন বলে মনে করছেন দেশটির নাগরিকরা। ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনে গত ৬ জানুয়ারির নজিরবিহীন হামলার এক সপ্তাহ পর জরিপ সংস্থা ইউগভের এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
‘আপনার নিরাপত্তার জন্যে এখন সবচেয়ে বড় হুমকি কী? শত্রু কোনো রাষ্ট্র? প্রাকৃতিক দুর্যোগ? মহামারি? পারমাণবিক হামলা?’ দু’দিন আগে প্রকাশিত ওই জরিপে এ প্রশ্নের উত্তরে ৫৫ শতাংশ আমেরিকান এগুলোর একটিকেও বড় হুমকি হিসেবে মনে করেননি। বরং তারা বলেছেন, নিজেদের জীবনের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি অন্য আরেক আমেরিকান, দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রু।
বিজ্ঞাপন
আমেরিকানরা যে তাদের নিরাপত্তার জন্য সহ-নাগরিকদের কতটা হুমকি হিসাবে দেখতে শুরু করেছে তা রাজধানী ওয়াশিংটনের বর্তমান চিত্র দেখলেই বুঝতে কষ্ট হবে না। বুধবার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ উপলক্ষে ওয়াশিংটনের বিশাল একটি এলাকা কার্যত নিশ্ছিদ্র এক দুর্গে পরিণত হয়েছে। একটু পরপর ব্যারিকেড, কাঁটাতারের বেড়া এবং ক্যাপিটলের চারদিকে সাত ফুট উঁচু ইস্পাতের অস্থায়ী দেয়াল।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাংবাদিকরা বলছেন, এমনকি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পরও ওয়াশিংটনে এমন চেহারা দেখা যায়নি। ৯/১১-তে ওয়াশিংটনের আকাশে যুদ্ধবিমান ছিল। কিন্তু মাটিতে এত সৈন্য ছিল না। শহরের যত এলাকা সেদিন লকডাউন করা হয়েছিল, এখন তার আওতা অনেক বেশি।
বিজ্ঞাপন
যে মাত্রায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ওয়াশিংটনে এখন দেখা যাচ্ছে তা আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পর দেখা যায়নি।
সবচেয়ে যে বিষয়টি একাধারে বিস্ময়, উদ্বেগ এবং আলোচনার জন্ম দিয়েছে তা হলো- হাজার হাজার সৈন্যকে নিরাপত্তা রক্ষায় মোতায়েন করা হচ্ছে; তাদের ভেতর থেকেই শপথের দিন জো বাইডেন এবং আগত বিশেষ অতিথিদের প্রতি হুমকি আসে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ।
আর এই আশংকা থেকেই ওয়াশিংটনের নিরাপত্তায় মোতায়েন ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যের সবার অতীত কর্মকাণ্ড যৌথভাবে খতিয়ে দেখছে সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই।
বার্তা সংস্থা এপি বলছে, এই সৈন্যদের নাম-ঠিকানাসহ সব ধরনের তথ্য এফবিআইয়ের ডেটাবেসে ঢুকিয়ে দেখা হচ্ছে যে সন্ত্রাস বা মারাত্মক কোনো অপরাধের জন্য তাদের কারো বিরুদ্ধে কখনো কোনো তদন্ত হয়েছে কিনা। এছাড়া কোনো সহকর্মীর কোনো সন্দেহজনক আচরণ কিভাবে শনাক্ত করতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
ভেতর থেকে কোনো হুমকি রয়েছে এমন সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই। কিন্তু আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নই।
মার্কিন অস্থায়ী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস মিলার
সেনাবাহিনীকে নিয়ে সন্দেহ-উদ্বেগ কেন?
৬ জানুয়ারির ক্যাপিটলে হামলা এবং ভাঙচুরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন সদস্যের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। হামলার দিনের যে নতুন নতুন ভিডিও ফুটেজ প্রতিদিন বের হচ্ছে তা দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, হামলায় জড়িত অনেকের সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল এবং তাদের মধ্যে যে পূর্ব-পরিকল্পনা এবং সমন্বয় ছিল তারও ইঙ্গিত রয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ক্যাপিটল ভবনে হামলায় ন্যাশনাল গার্ডের অন্তত দু’জন সদস্যের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নৌ-বাহিনীর সাবেক এক সদস্যের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএস খবর দিয়েছে, নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে একদল ট্রাম্প সমর্থককে নেতৃত্ব দিয়ে ওয়াশিংটনে আসার জন্য সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন র্যাংকের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিবিএস বলছে, নর্থ ক্যারোলাইনার পোর্ট ব্রাগ থেকে কতজন সৈনিক ক্যাপ্টেন রেইনির সাথে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনী তা তদন্ত করছে।
ক্যাপ্টেন রেইনি পদত্যাগ করেছেন আর এসব কারণে পেন্টাগনের ওপর চাপ বাড়ছে। চাপের মুখে ওয়াশিংটনে নজিরবিহীন তাণ্ডবের এক সপ্তাহ পর স্থল, নৌ এবং বিমানবাহিনীসহ মার্কিন সেনাবাহিনীর সব শাখার শীর্ষ কমান্ডাররা যৌথভাবে সব সেনা সদস্যদের প্রতি এক বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করেছেন যে, ক্যাপিটল ভবনে হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং সংবিধানের ওপর ‘সরাসরি হামলা’ যা দেশদ্রোহের সামিল।
সেনাবাহিনীর ভেতর উগ্রবাদী, বর্ণবাদী, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আমেরিকাতে নতুন কিছু নয়।
দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উগ্রবাদী তৎপরতা নিয়ে ২০২০ সালে এফবিআই যে ১৪৩টি তদন্ত করেছে; তার ৬০টির সাথে বর্তমানে কর্মরত এবং সাবেক সেনা সদস্যের সংশ্লিষ্টতা ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহে ক্যাপিটলে হামলায় নিশ্চিতভাবে বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকুরিরত সেনা সদস্যের অংশগ্রহণ স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, সেনা এবং নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে এমন লোকজন রয়েছেন; যারা বিশ্বাস করেন নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপি করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো হয়েছে।
এসএস