বুধবার (২০ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শেষ দিন। আর কয়েক ঘণ্টা পরই সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউস এমনকি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে চলে যাবেন তিনি। বিদায় নেওয়ার আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে সেই ভাষণে ট্রাম্পের মুখে নেই তার উত্তরসূরী জো বাইডেনের নাম।

বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যা করতে এসেছিলাম, তা করেছি। আমি কঠিন লড়াই করেছি। সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলো আমি গ্রহণ করেছিলাম। কারণ আপনারা আমাকে এজন্যই নির্বাচিত করেছিলেন।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবগুলো প্লাটফর্মে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টে নিজের বিদায়ী ভাষণ দেন তিনি।

২০ মিনিটের এই ভাষণটি গত সোমবার রেকর্ড করা হয়। আর প্রচার করা হয় পরদিন মঙ্গলবার।

বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার প্রশাসন ‘যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এজেন্ডা ডানপন্থী বা বামপন্থী, রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্র্যাটের বিষয় নয়, এটা পুরো জাতির জন্য, পুরো জাতির জন্য।’

ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্টের দপ্তর ছাড়ছেন, তখন তার জনসমর্থনের হার ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা কোনো বিদায়ী প্রেসিডেন্টের জন্য সর্বনিম্ন।

নিজের শাসনামলে বিভিন্ন শান্তি চুক্তির কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘(মার্কিন) প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি গর্বিত। কারণ কোনো নতুন যুদ্ধ আমি শুরু করিনি।’

উত্তরসূরী জো বাইডেনের বিষয়ে কোনো কথা না বললেও ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সমর্থকদের হামলা ও সহিংসতার বিষয়ে বিদায়ী ভাষণে কথা বলেন ট্রাম্প। তার দাবি, ‘ক্যাপিটল ভবনে হামলায় সকল আমেরিকান আতঙ্কিত হয়েছিলো। এটা কখনই সহ্য করা যায় না।’

অবশ্য ক্যাপিটলে হামলায় সমর্থকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু মঙ্গলবার সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় ‘প্রেসিডেন্ট ও অন্য ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা উস্কানি দিয়েছিলেন’।

ট্রাম্প বলেন, ‘এই সপ্তাহে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেবে। আমেরিকাকে তারা (বাইডেন প্রশাসন) নিরাপদে রাখবেন; সেই প্রার্থনা করছি। আমরা তাদের শুভকামনা জানাই।’

নতুন প্রশাসন বুধবার দায়িত্ব নেবে, ট্রাম্প এর আগেও এমন কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। এমনকি ঐতিহ্য অনুযায়ী, আগের প্রেসিডেন্টদের মতো বিদায়ী ভাষণে উত্তরসূরীকে নিয়ে বিশেষভাবে কিছু বলেননি।

ট্রাম্প অবশ্য ক্যাপিটলে হামলায় উস্কানির অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের শিকার হয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন; যারা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অংশ নেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রথমবারের মতো অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় দেশটির পার্লামেন্টের এই নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে।

কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত অভিশংসন থেকে মুক্তি পান ট্রাম্প।

স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৮টায় মেরিল্যান্ডে অ্যান্ড্রুজ ঘাঁটিতে ট্রাম্পের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হোয়াইট হাউস। বিদায় অনুষ্ঠান শেষে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচে যাবেন ট্রাম্প। সেখানে তার মার-এ-লাগো অবকাশ যাপন কেন্দ্রে কাটাবেন হোয়াইট হাউস পরবর্তী জীবন।

২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন ট্রাম্প। প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসনের পর তার ভাগ্য এখন ঝুলছে সিনেটের হাতে। সেখানে চূড়ান্তভাবে অভিশংসিত হলে পরের নির্বাচিনে আর প্রার্থী হতে পারবেন না ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ফ্লোরিডার এই অবকাশ যাপন কেন্দ্রেই থাকবেন ট্রাম্প

তবে কী সারা জীবনের মতোই হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন ট্রাম্প। জানতে হলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

সূত্র: সিএনবিসি

টিএম