যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ল্যাপটপ চুরির অভিযোগে ট্রাম্প সমর্থক এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ওই নারীর নাম রিলেই জুন উইলিয়ামস। পেনসিলভ্যানিয়ার মিডল ডিস্ট্রিক্ট থেকে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে মার্কিন আইন দপ্তর।

২২ বছর বয়সী জুন উইলিয়ামসের বিরুদ্ধে ক্যাপিটল ভবনে অবৈধভাবে জোরপূর্বক প্রবেশ, ল্যাপটপ চুরি ও তা রাশিয়ার কাছে বিক্রির পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। কংগ্রেসের যৌথ ওই অধিবেশনে সেদিন জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছিল।

একপর্যায়ে ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ও মূল ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন ট্রাম্প সমর্থকরা। হামলাকারীদের অনেকেই ছিল সশস্ত্র। ভেতরে ঢুকে সিনেট হলে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় তারা।

শুধু তা-ই নয়, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতার কার্যালয়ও তছনছ করে তারা। হামলা-সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন পাঁচজন। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৬ জানুয়ারি একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়।

ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ল্যাপটপ ও হার্ড ড্রাইভ চুরি হয়ে যায়। হামলাকারীদের কেউ ক্যাপিটলে পেলোসির কার্যালয় থেকে তার ব্যক্তিগত ল্যাপটপটি চুরি করেছেন বলে সন্দেহ করা হয়।

সেই ল্যাপটপের সন্ধান করতে গিয়েই প্রথমে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে সেই যুবকের নিকট পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার পেনসিলভ্যানিয়ায় নিজের বাড়ি থেকেই রিলেই জুন উইলিয়ামসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ওই নারীর নিকট থেকে ঠিক কী কী উদ্ধার করা হয়েছে, এখনও তা স্পষ্ট করে জানায়নি পুলিশ।

ক্যাপিটল হিলে হামলা ও সহিংসতার যাবতীয় সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ সামনে এসেছে। সেখানে একটি সবুজ টি শার্ট পরে স্লোগান দিতে দিতে ল্যাপটপ চুরি করতে দেখা যায় ওই নারীকে।

এর আগে ন্যান্সি পেলোসির সহকারী ড্রিউ হ্যামিল এক টুইটবার্তায় জানিয়েছিলেন, চুরি যাওয়া ল্যাপটপটি ক্যাপিটলে পেলোসির কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে রাখা ছিল এবং কেবল প্রেজেন্টেশনের কাজে এটি ব্যবহার করা হতো।

টুইটবার্তায় এর বেশি আর কিছু লেখেননি হ্যামিল।

৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক বলে পরিচিত ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উস্কানিতেই সমর্থকরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপরই প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে ডেমোক্র্যাটরা। হামলায় উস্কানির অভিযোগ অস্বীকার করেও প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের শিকার হয়েছেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়েছেন তিনি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন; যারা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অংশ নেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রথমবারের মতো অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় দেশটির পার্লামেন্টের এই নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত অভিশংসন থেকে মুক্তি পান ট্রাম্প।

২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন ট্রাম্প। প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসনের পর তার ভাগ্য এখন ঝুলছে সিনেটের হাতে। সেখানে চূড়ান্তভাবে অভিশংসিত হলে পরের নির্বাচিনে আর প্রার্থী হতে পারবেন না ট্রাম্প।

সূত্র: বিবিসি

টিএম