সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার, এমপি, এমএলএ ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কোনো ধরনের মন্তব্য করলেই জেলে পুরে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকার।

নীতীশ কুমার শুক্রবার যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, তাতে সরকারের যদি মনে হয় সামাজিক মাধ্যমের কোনো মতামত অমর্যাদাকর বা আপত্তিকর, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে হবে। জেলও হতে পারে।

সব সরকারি বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকার, এমপি, এমএলএ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে আপত্তিকর ও অমর্যাদাকর কিছু দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে জানাতে। তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিছুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা নিয়ে ক্ষুব্ধ নীতীশ। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারেও তিনি বারবার বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে তার সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটানো ও অন্যায্য সমালোচনা করা হয়।

বিজেপির সমর্থন নিয়ে বিহারে সরকার গড়া মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবার আর সরকারবিরোধী ‘অমর্যাদাকর ও আপত্তিকর’ সমালোচনা বরদাস্ত করতে রাজি নন। এই ধরনের সমালোচনা হলেই শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর তিনি।

নীতীশের এই সিদ্ধান্তের পরই বিহারের বিরোধীনেতা ও লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘ষাটটি কেলেঙ্কারির নায়ক নীতীশ কুমার হলেন দুর্নীতির ভীষ্ম পিতামহ। তিনি অপরাধীদের রক্ষাকর্তা। তিনি হলেন অনৈতিক ও অবৈধ সরকারের দুর্বল প্রধান।’

অবশ্য এখানেই থামেননি তেজস্বী যাদব। তিনি আরও বলেছেন, ‘হিটলারের পথ অনুসরণ করছেন নীতীশ। তিনি বিহারে গণতন্ত্রকে শেষ করে দিচ্ছেন। নীতীশকে তার চ্যালেঞ্জ, ‘এবার পারলে আমায় গ্রেপ্তার করুন।

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার জন্য পশ্চিমবঙ্গসহ অনেক রাজ্যেই অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কার্টুন এঁকে জেলে যেতে হয়েছিল অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। উত্তরপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে রাজনৈতিক নেতা বা সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে লেখার জন্য শাস্তি পেতে হয়েছে অনেককে।

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘কার্টুনিস্ট শংকরকে জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, আমাকেও ছেড়ো না। কার্টুন করো। সেই জায়গা থেকে কোন জায়গায় এসে পৌঁছেছি আমরা। নীতীশের মতো সমাজবাদী ভাবধারার নেতা (জেডিইউ প্রধান) যদি এই সিদ্ধান্ত নেন তাহলে কিছু বলার নেই।’

তার বক্তব্য, ‘এই প্রবণতা এখন উত্তর-পূর্ব ভারতেও দেখা যাচ্ছে। মণিপুরে একজন সম্পাদককে তার একটি লেখার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওখানকার অন্য রাজ্য থেকেও এরকম কিছু খবর আসছে। খুবই চিন্তার বিষয়।’

আপত্তিকর বা অমর্যাদাকর সেটা কে ঠিক করবে— এমন প্রশ্ন তুলে শুভাশিস বলেন, ‘কোন্ পোস্ট মর্যাদাহানিকর অথবা আপত্তিকর কিনা সেটা তো পুরোপুরি ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয়। ফলে তার বিচার অত্যন্ত জটিল ও কঠিন।’

এএস