চার বছরে ৩০ হাজার ৫৭৩ বার মিথ্যা বলেছেন ট্রাম্প
• চার বছরে ট্রাম্পের মুখে ৩০ হাজার ৫৭৩টি মিথ্যা
• এর প্রায় অর্ধেকই বলেছেন ক্ষমতার শেষ বছরে
• প্রথম বছরে দিনে বলেছেন অন্তত ৪টি করে মিথ্যা
• দ্বিতীয় বছরে গড়ে প্রতিদিন ১৬টি আর, তৃতীয় বছরে দিনে ২২টি
• চতুর্থ বছরে তা বেড়ে হয় দিনে ৩৯টি
• কংগ্রেসে হামলার দিনও দেওয়া বক্তৃতায়ও বলেছেন ১০৭টি মিথ্যা
গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে সাবেক হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগের সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের শিকার হয়েছেন তিনি। সিনেটের শুনানি এখনও বাকি।
বিজ্ঞাপন
তবে এরই মাঝে নতুন তথ্য সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট। পত্রিকাটি বলছে- প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরে ট্রাম্প ৩০ হাজার ৫৭৩ বার মিথ্যা কথা বলেছেন। তবে এর প্রায় অর্ধেকই তিনি বলেছেন ক্ষমতার শেষ বছরে।
মাত্র চারদিন আগে হোয়াইট হাউস ছেড়ে ট্রাম্প উঠেছেন ফ্লোরিডার অবকাশযাপন কেন্দ্র ‘মার-এ-লাগো’-তে। বিশ্বের নেতৃত্ব ও নির্বাচনী ডামাডোলে ক্লান্ত ট্রাম্প চারবছর পর সব কিছু থেকে ‘মুক্ত থাকতে’ ছুটে গিয়েছেন ফ্লোরিডায়।
বিজ্ঞাপন
লক্ষ্য সবকিছু বাদ দিয়ে আপাতত কয়েকটি দিন নিজের মতো করে কাটানো। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট আর তা হতে দিলো কই! পত্রিকাটির এই প্রতিবেদনে প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে মিথ্যাবাদী প্রেসিডেন্টের তকমা বসে গেছে ট্রাম্পের নামের পাশে।
পত্রিকাটির দাবি- ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রকাশ্যে মিথ্যা বলেছেন ৩০ হাজার ৫৭৩ বার। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বারই বলেছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদের শেষ বছরে।
প্রতিবেদনে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’র দাবি করেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতায় পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিভিন্ন ইস্যুতে অযৌক্তিক ও বিতর্কিত দাবি করতেও দেখা গিয়েছিল ট্রাম্পকে।
তাই ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে প্রথম ১০০ দিন ট্রাম্পের প্রতিটি মন্তব্যের রেকর্ড রাখতে শুরু করে ওয়াশিংটন পোস্ট। পরে ১০০ দিন পার হলেও সদ্যসাবেক এই প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের নিয়মিত রেকর্ড রাখা শুরু করে তারা।
ট্রাম্পের বক্তব্যের মধ্যে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা তা যাচাই করতে একটি বিশেষ ‘ফ্যাক্ট চেকিং টিম’ও গঠন করা হয়। একটানা চার বছর ট্রাম্পের সত্য ও মিথ্যা বক্তব্যের হিসাব রাখে ওই টিম।
গত বুধবার বাইডেনের শপথের ঘণ্টা দুয়েক আগে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে গেলে শুরু হয় সত্য-মিথ্যার হিসাব মেলানোর কাজ। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে- চার বছরে ট্রাম্পের সকল মিথ্যা দাবি বা বক্তব্যের মোট সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৫৭৩টি।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম বছরে প্রকাশ্যে দিনে অন্তত ৪টি করে মিথ্যা কথা বলেছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় বছরে গড়ে প্রতিদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬টিতে। তৃতীয় বছরে দিনে ২২টি এবং চতুর্থ বছরে তা বেড়ে হয় দিনে ৩৯টি!
প্রভাবশালী এই মার্কিন পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসে প্রথম ১০ হাজার মিথ্যা বলতে ট্রাম্পের সময় লেগেছিল ২৭ মাস বা দুই বছর ৩ মাস। পরের ১০ হাজারের জন্য ট্রাম্পের সময় লাগে ১৪ মাস বা এক বছর ২ মাস। সময় হিসেবে যা প্রথমটির তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে ট্রাম্প যেন মিথ্যা বলার গতি আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন। অর্থ্যাৎ মিথ্যা বলায় ২০ হাজারের কোটা পেরোনোর মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় ট্রাম্প পেরিয়ে যান ৩০ হাজারের কোটাও!
এক এক করে ৩০ হাজারের অধিক। প্রশ্ন থেকে যায়; এতো এতো মিথ্যা কোথায় বলেছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি- যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন জনসভা এবং নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই এসব মিথ্যা বলেছেন ট্রাম্প।
কয়েকটি বিষয়ে উদাহরণও সামনে এনেছে পত্রিকাটি। তারা জানিয়েছে, মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে অভিবাসীরা ধেয়ে আসছে বলে বক্তব্য দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প।
এমনকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক জো বাইডেনের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর ২০১৯ সালে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন- ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার (ট্রাম্প) কথা হয়েছে এবং তিনি জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন।’
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দী হিসেবে বাইডেনের নাম নিশ্চিত হওয়ার ওই বিষয়ে কেবল চার মাসে এক হাজার মিথ্যা কথা বলেছিলেন ট্রাম্প।
এছাড়া করোনাভাইরাস নিয়েও ট্রাম্প আড়াই হাজারের বেশি বার মিথ্যা বলেছেন বলে জানিয়ে পত্রিকাটি বলছে- নির্বাচনের আগে গত অক্টোবর মাসে ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হলেও টানা ছয়দিন তিনি সেটা প্রকাশ করেননি। তারপরও ওই মাসে (অক্টোবর) ট্রাম্প দিনে প্রায় ১৫০টি করে মোট চার হাজার মিথ্যা কথা বলেছিলেন।
এমনকি নির্বাচনে পরাজয়ের পরও মিথ্যা বলা ছেড়ে দেননি ট্রাম্প। নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ একের পর এক করতেই থাকেন ট্রাম্প। দাবি করেছিলেন- ‘নির্বাচনের ফল তার নিকট থেকে চুরি করা হয়েছে।’
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, নির্বাচনে জালিয়াতি ও ভোট গণনায় কারচুপি সংক্রান্ত কমপক্ষে ৬০টি মামলা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালতে খারিজ হয়ে গেলেও, ‘হাল ছেড়ে’ না দিয়ে আট শতাধিক মিথ্যা দাবি করেছেন ট্রাম্প।
আবার সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা চালানোর আগে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প যে উস্কানিমূলক কথা বলেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়- সেখানেও তিনি (ট্রাম্প) ১০৭টি মিথ্যা বলেছেন বলে দাবি করেছে প্রভাবশালী এই মার্কিন পত্রিকা।
এদিকে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেই অভিশংসন ঠেকাতে এরই মধ্যে অবশ্য আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
একবছরেরও বেশি কিছু সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হওয়া ট্রাম্প যদি এবার সিনেটেও অভিশংসনের শিকার হন, তাহলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হতে পারবেন না।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
টিএম