প্রজাতন্ত্র দিবসে ৬০ হাজার ট্রাক্টর নিয়ে কৃষকদের দিল্লি যাত্রা
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে ৬০ হাজার ট্রাক্টর নিয়ে রাজধানী দিল্লিতে মিছিল করবেন কৃষকরা। এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষে করে এনেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলো।
দিল্লির বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বর্তমানে ট্রাক্টরগুলো অবস্থান করছে; দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত ছেয়ে গেছে পোস্টার, ব্যানারে। ২৬ জানুয়ারি বিশাল প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য চাপা উত্তেজনা কাজ করছে কৃষকদের মধ্যে।
বিজ্ঞাপন
দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের অন্যতম সংগঠন কিষান সভার সাধারণ সম্পাদক অতুলকুমার অঞ্জন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলেছি। বিভিন্ন সীমান্তে অপেক্ষা করছে ৬০ হাজার ট্রাক্টর। এছাড়াও দেশ জুড়ে ১৯৪টি জেলায় একসঙ্গে ট্রাক্টর মিছিল হতে চলেছে।’
প্রজাতন্ত্র দিবেসের দিন ট্রাক্টর মিছিলের বিষয়ে বিস্তর টানাপড়েনের পর অবশেষে কৃষক নেতাদের সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছেছে দিল্লি পুলিশ। প্রাথমিক পর্যায়ে দিল্লির রিং রোড থেকে ট্রাক্টর মিছিল শুরু করার পরিকল্পনা ছিল কৃষকদের, কিন্তু পুলিশের আপত্তির কারণে তা পরিবর্তন করে বিকল্প ৩টি পথে মিছিল এগোবে বলে জানিয়েছেন কৃষক নেতারা।
বিজ্ঞাপন
২৬ জানুয়ারি যে পথগুলো দিয়ে মিছিল শুরু হবে সেগুলো হলো দিল্লি হরিয়ানার সীমান্ত এলাকা সিংঘু, তিকরি এবং গাজিপুর ইউপি গেট। কৃষক সংগঠনগুলোর পরিকল্পনা অনুযায়ী- এই তিন ঘাঁটি থেকে মিছিল শুরু হয়ে এগিয়ে চলবে, ফিরে আসবে দিল্লিতে কৃষকদের মূল জমায়েতের এলাকা সিংঘুতে।
শুক্রবার একাদশ বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই পূর্ব নির্ধারিত ট্রাক্টর মিছিলের আয়োজন শুরু করেন কৃষক নেতারা; সে সময় তারা দাবি করেছিলেন পুলিশ মিছিলের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু পরে পুলিশ দাবি করে, কৃষকরা কোনও নির্দিষ্ট পথের কথা জানাননি, তাই অনুমতির প্রশ্ন ওঠে না।
রোববার সকালে সেই নিয়ে আবার প্রতিবাদরত কৃষকরা জানিয়ে দেন, তারা পুলিশের অনুমতি না পেলেও মিছিল করবেন। তবে রাজপথে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁরা কোনও ধরনের ব্যাঘাত তারা ঘটাবেন না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। পরে কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মিছিল করার অনুমতি দেয় দিল্লি পুলিশ।
মহারাষ্ট্রে হাজারো কৃষকের পদযাত্রা, সভা
এদিকে, দিল্লিসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া কৃষক আন্দোলনে সমর্থন ও কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী শহর মুম্বাইয়ে জমায়েত হয়ে রোববার পদযাত্রা করেছেন হাজার হাজার কৃষক।
সোমবার থেকে শহরের আজাদ ময়দানে ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান নেবেন তারা। কৃষকদের এই প্রতিবাদে ইতোমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), কংগ্রেস, শিবসেনা, বহুজন বঞ্চিত আগাড়ি (ভিবিএ) এবং বাম দলগুলো। সোমবারের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার-সহ বেশ কয়েকজন কৃষক ইউনিয়ন নেতার।
রোববার মুম্বাই অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হওয়ার আগে শনিবার মহারাষ্ট্রের ২১টি জেলার প্রায় ১৫ হাজার কৃষক জড়ো হন রাজ্যের নাসিক জেলার গলফ ক্লাব ময়দানে। সেখান থেকে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানের দিকে পায়ে হেঁটে রওনা দেন তারা।
পদযাত্রার আহ্বায়ক মহারাষ্ট্রের কৃষক ইউনিয়ন সংযুক্ত শ্বেতকারি কামগার মোর্চার (এসএসকেএম) ব্যানারে জড়ো হয়েছেন রাজ্যের অসংখ্য কৃষক। কৃষি আইনের বিরুদ্ধে মোর্চার এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে বহু রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী এবং নাগরিক সংগঠনও।
এই প্রতিবাদ নিয়ে মোর্চার আহ্বায়ক অশোক ধনওয়ালে বলেন, `নাসিক থেকে ১৮০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে পৌঁছাবেন কৃষকেরা। আজাদ ময়দানে একটি ধর্নার (অবস্থান কর্মসূচি) আয়োজন করেছি আমরা। সোমবার ধর্নার পর রাজভবনে মিছিল নিয়ে যাওয়া হবে। ওই প্রতিবাদে শামিল হবেন শারদ পাওয়ার, আদিত্য ঠাকরে এবং বালাসাহেব থোরাটের মতো শীর্ষ নেতারা।'
গত ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির সিংঘু সীমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের ৩টি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে কৃষকদের। এর মধ্যে কৃষক ইউনিয়নের সঙ্গে কেন্দ্রের ১১ দফার বৈঠকও ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনের প্রায় দু’মাস পার হলেও ওই আইনগুলো প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষকেরা।
ধনওয়ালে বলেন, “আমাদের মূল দাবি হল, ওই তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি নতুন আইন করে দেশজুড়ে কৃষকদের ফসলের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) গ্যারান্টি দিতে হবে সরকারকে। এসব দাবি ছাড়াও বিদ্যুৎ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলনে নেমেছি।”
ধনওয়ালে জানিয়েছেন, সোমবার ধর্না-প্রতিবাদের কর্মসূচি শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি। প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
নাসিক থেকে মুম্বাইয়ের উদ্দেশে কৃষকদের পদযাত্রা ইতোমধ্যেই শিরোনামে উঠে এসেছে। রোববার সকাল থেকেই নাসিকের রাস্তায় ব্যানার-পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মুম্বাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন কৃষকেরা। সেই ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়।
এসএমডব্লিউ