ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি হতে হবে: বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার (২৫ জানুয়ারি) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার পূর্বসূরীর অভিশংসনের ব্যাপারে এই প্রথম মুখ খুললেন বাইডেন। হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইং হলে বসে সিএনএন’কে সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানির বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বাইডেন। তিনি স্বীকার করেন, সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানির প্রভাব তার মন্ত্রিসভার মনোনীত সদস্য ও আইনসভায় আলোচ্যসূচির ওপর পড়তে পারে। কিন্তু এই শুনানি না হলে তার প্রভাব হবে আরও ভয়ঙ্কর।
বিজ্ঞাপন
বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের মেয়াদের ছয় মাস বাকি থাকতে এই অভিশংসন শুনানি অনুষ্ঠিত হলে এর ফলাফল হতো অন্যরকম। তবে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটর ভোট দেবেন না বলেও মনে করেন বাইডেন।
বাইডেনের কথায়, ‘আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যা (ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে) পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেটা খুব বেশি (ট্রাম্পের অভিশংসনের জন্য) নয়।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই বক্তব্যের দিনেই ট্রাম্পের অভিশংসন সংক্রান্ত নথিপত্র সিনেটের হাতে হস্তান্তর করেছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটদলীয় আইনপ্রণেতারা। স্থানীয় সময় সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির মনোনীত নয় জন হাউস ম্যানেজার অভিশংসন সংক্রান্ত নথিপত্র সিনেটের কাছে হস্তান্তর করেন।
আর এর মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পরও ট্রাম্পের চূড়ান্ত অভিশংসন প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিনেটে এই শুনানি হতে পারে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এই অভিশংসন বিচারে প্রসিকিউটরের ভূমিকায় থাকবেন প্রতিনিধি পরিষদের নয়জন ডেমোক্র্যাট সদস্য। সোমবার ট্রাম্পের অভিশংসন নথি জমা দেওয়ার আগে তারা হাউসের সচিব অ্যাট আর্মসকে সঙ্গে নিয়ে নীরবে পুরো ক্যাপিটল প্রদক্ষিণ করেন। এরপরই অভিশংসন বিচারের জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সিনেটের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
পরে হাউসের প্রধান প্রসিকিউটর জেমি রাসকিন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান। এতে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে ক্যাপিটলে হামলা ও সহিংসতা চালানোর আগে দেওয়া বক্তৃতায় সমর্থকদের উসকানি দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তৎকালীন ওই প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২০ জানুয়ারি।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। আর এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়েন তিনি। ট্রাম্পের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন।
কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগও করেছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের হাতে। সিনেটে অভিশংসিত হলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না তিনি।
সূত্র: সিএনএন
টিএম