মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লাকে পদত্যাগপত্র দেবেন প্রধানমন্ত্রী কন্তে।

শরিক দল ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার পর গত সপ্তাহে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে আস্থা ভোটে টিকে গেলেও ‘কৌশলগত’ কারণে পদত্যাগ করছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কন্তে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কন্তে।

সরকারের করোনা মোকাবিলা তহবিলের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির দল জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ করতে কংগ্রেসের উভয়কক্ষে আস্থা ভোট হয়।   

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এক অনলাইন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উভয়কক্ষে আস্থা ভোটে টিকে গেলেও নতুন সরকার গঠন করে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়ানোর কৌশলের অংশ হিসেবে পদত্যাগ করছেন কন্তে।

আগামী বুধবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে একটি জুডিশিয়াল রিপোর্টের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা। যেখানে কন্তে হেরে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বুধবারের ভোটে হেরে যাওয়ার শঙ্কায় আগেই কন্তেকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছে সরকারের প্রধান দুই শরিক দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট (এম৫এস) এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডি)।

কন্তে পদত্যাগ করলে প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা জোটের সমর্থন বাড়িয়ে নতুন করে একটি সরকার নির্দেশ দেবেন। এর মধ্যে সমর্থন বাড়িয়ে নতুন করে সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হবে ক্ষমতাসীন জোটের।

এমনটা হতে পারে সরকারের নেওয়ার নীতিতে আপত্তি জানিয়ে জোট ছেড়ে যাওয়া ইতালিয়ান ভিভা পার্টি যদি আবার জোটে ফিরে আসে। আর তা নাহলে ইতালিতে নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী কন্তের সঙ্গে ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজির নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

সরকারে এই অস্থিতিশীলতা তৈরি হল যেভাবে      

করোনার পুনরুদ্ধার তহবিলের ব্যয়ে কন্তের পরিকল্পনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি আপত্তি জানানোর পর জোট থেকে তার দল ইতালিয়ান ভিভা পার্টি বেরিয়ে যাওয়ার পর সরকারে এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

মাত্তেও রেনজি চান এই অর্থ ডিজিটাল অর্থনীতি ও গ্রিন এনার্জি খাতে ব্যয় করতে। ব্যয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতাদের অগ্রাধিকার না দিয়ে টেকনোক্র্যাটদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোরবিরোধী তিনি।

ভিভা পার্টি জোট ছাড়ার পর আস্থা ভোটে প্রথমে নিম্নকক্ষ চেম্বার অব ডেপুটিজ-এ ৩২১-২৫৯ ভোটের ব্যবধানে সরকারের উপর আইনপ্রণেতাদের আস্থার প্রমাণ দিতে সক্ষম হন প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কন্তে।  

এর কয়েকদিন পর উচ্চকক্ষ সিনেটে ১৫৬-১৪০ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণিত হলেও ১৬ জন সিনেটর অনুপস্থিত থাকায় কন্তে যে সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পেরেছেন এমনটা নিশ্চিত হয়নি তখন।

সিনেটে আস্থা ভোটের দিন হওয়া বিতর্কে রেনজি প্রধানমন্ত্রী কন্তেকে আরও সাহসী অর্থনৈতিক সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মার্শাল প্ল্যানের পর সবচেয়ে বড় সুযোগ হাতছাড়া করছে ইতালি।’

কন্তের বিরুদ্ধে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো আগেই পূরণ করার করার অভিযোগ তুললেও মাত্তেও রেনজি অবশ্য বলেছিলেন, তার দেওয়া প্রস্তাবগুলো যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে তিনি আবার জোটে ফিরবেন।   

সিনেট ওইদিন কন্তে বলেন, ‘এমন সরকার পরিচালনা করাটা খুব কঠিন। অনেকেই আমাদের এই পথে বারবার বাধার সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা।’  

তবে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে টিকে গেলেও বিরোধী দলগুলো তখন বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী কন্তেকে পদত্যাগে বাধ্য করতে তারা প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লাকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানানোর পরিকল্পনা করছেন।

বিবিসি লিখেছে, ইউরোপে এক সময় করোনার প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র ইতালিতে ভাইরাসটির সংক্রমণে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে দেশটিতে এমন রাজনৈতিক অচলাবস্থার তৈরি হয়েছে। 

এএস