পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ইসলামি কট্টরপন্থী গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ভর্ৎসনা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

সোমবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন। দেশের সরকার আপনার নেতৃত্বে চলে। কিন্তু তারপরও কিছু স্বীকৃত অপরাধীকে আপনি আলোচনার টেবিলে নিয়ে এলেন। এটা আপনি কী করলেন? কীভাবে করতে পারলেন? আমরা কি আবারও তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছি?’

মঙ্গলবার পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তি করেছে তালেবান। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি এক বিৃবতিতে জানিয়েছেন, যদি উভয়পক্ষ সম্মত থাকে, সেক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়বে।

এই ঘটনার জেরে বুধবার ইমরান খানকে তলব করেন সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রশ্ন করেন- কোন যুক্তিতে তিনি একটি নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন? এক্ষেত্রে ২০১৪ সালের পেশোয়ারে টিটিপির হামলার উদাহারণ টানেন আদালত।

২০১৪ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের এপিএস ওয়ারসাক স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৪৭ জনকে হত্যা করেছিল টিটিপি। নিহতদের ১৩২ জনই ছিল শিশু।

আদালতের প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ২০১৪ সালের হামলা তার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক স্মৃতি, কারণ সে সময় পেশোয়ারে তার দল ক্ষমতাসীন ছিল।

‘কিন্তু তারপর ওই অঞ্চলে মোট ৪৮০ বার ড্রোন হামলা হয়েছে, এতে মারা গেছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। এ হামলাগুলো কে করল, কারা করল-সেটিও তো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন’- আদালতের উদ্দেশে বলেন ইমরান।

তার এই মন্তব্যের উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করা তো আপনার কাজ। আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান হিসেবে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আপনার দায়িত্ব এবং আপনার কাছে উত্তর থাকা উচিত।’

‘জনাব প্রধানমন্ত্রী, আমরা কিন্তু কোনো ছোট দেশ নই। বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সামরিক বাহিনী রয়েছে আমাদের।’

প্রধানমন্ত্রীকে ভর্ৎসনার পাশাপাশি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিও উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যখন নিজের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে, তখন গোয়েন্দা সংস্থা কোথায় থাকে? পেশোয়ারের ঘটনায় সাবেক সেনা প্রধান বা সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো মামলা করা হয়েছিল?’

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তদন্তকারী দল ঘটনার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি।

কিন্তু তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হয়ে খেদ প্রকাশ করে আদালত বলেন, ‘আমাদের একটি বিশাল গোয়েন্দা সংস্থা আছে। প্রতি মাসে কোটি কোটি রুপি এই সংস্থার পেছনে খরচ হচ্ছে। সরকার দাবি করে, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা সংস্থা। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এই গোয়েন্দা সংস্থার আউটপুট শূন্য।’

এসএমডব্লিউ