• গত বছর ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল
• নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ১৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ
• গত বছর চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ
• ২০২১ সালে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস
• দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়ানো শুরু করার তাগিদ
• এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ৩০ শতাংশ হবে চীনে

বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্মক এক ঝাঁকুনির মধ্যে রয়েছে এবং এখনো মহামারির বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে; যার প্রভাব বছরের পর বছর ধরে অনুভূত হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। 

এমন শঙ্কার সঙ্গে সোমবার জাতিসংঘ ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে যে, কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ২০২০ সালের ক্ষতির ছায়া লেগেই থাকবে। 

জাতিসংঘের ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক নতুন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ‘করোনার মতো সংকট শতাব্দীতে একবারই আসে। আর এতে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।’ 

১৯২৯ সালের মহামন্দার পর গত বছর বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হয়েছে। ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ের চেয়ে এই সংকোচন ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।  

জাতিসংঘের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক সহকারী মহাসচিব ইলিয়ট হ্যারিস বলেন, ‘অভূতপূর্ব সংকটের গভীরতা ও তীব্রতা ধীরে ধীরে বেদনাদায়ক এক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘টিকা দেওয়া শুরুর মধ্য দিয়ে আমরা যখন দীর্ঘস্থায়ী এক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু করছি তখন আমাদের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়ানো শুরু করা দরকার। এটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথকে সহজ করে তোলার সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অকাল বিপর্যয় এড়াতে সহায়ক হবে।’ 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত বিধিনিষেধ জারি করে জীবন বাঁচানো গেলেও বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তাতে বলা হচ্ছে, দেশে দেশে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক লকডাউন গত বছরের এপ্রিলের মধ্যে ২৭০ কোটি শ্রমিকের জীবিকায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে; যা বিশ্বের মোট জনশক্তি অর্থাৎ মোট কর্মীবাহিনীর প্রায় ৮১ শতাংশ।

এতে করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও শিশুসহ ১৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের নাম নতুন করে দারিদ্র্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে; যা বিশ্ব অর্থনীতি তথা মানবসম্প্রদায়ের জন্য বিশাল এক ধাক্কা বলে অভিহিত করা হয়েছে।

করোনা প্রথম শনাক্ত হওয়া ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনই একমাত্র দেশ যেখানে ২০২০ সালেও ২.৪% শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জাতিসংঘের নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছরও চীনের ৭.২% প্রবৃদ্ধি হবে।   

জাতিসংঘের বিশ্ব অর্থনীতি মনিটরিং শাখার প্রধান ও এই প্রতিবেদনের প্রধান লেখক হামিদ রশিদ প্রতিবেদনটির উন্মোচন করে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ৩০ শতাংশ হবে চীনে।   

যদি এই পূর্বাভাস সত্য হয় তাহলে এটা আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের জন্য বেশ সহায়ক হবে। কেননা এসব দেশ চীনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাঁচামাল সরবরাহ করে।  

জাতিসংঘের দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ সংকোচনের পর ২০২০ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। 

তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জাপানের অর্থনীতি গত বছর ৫ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হলেও ২০২০ সালে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ইউরো-জোনের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ শতাংশ। গত বছর ৭ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। 

গত বছর বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির সংকোচন উন্নত দেশগুলোর চেয়ে কম ছিল; গড়ে যা ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে চলতি বছর এসব দেশে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছে জাতিসংঘ। 

জি-২০ জোটের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্দিহান হলেও বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশের কেন্দ্র প্রধান এই বিশ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির পথে ফিরলে বিশ্ব অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে জাতিসংঘ।  

এএস