দিল্লিতে সংঘর্ষের নিন্দা সংযুক্ত কিষান মোর্চার
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লিতে কৃষক ও পুলিশের মধ্যে সৃষ্ট সহিংসতায় গভীর শোক ও নিন্দা জানিয়েছে ভারতে আন্দোলনরত কৃষকদের মঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চা। মঙ্গবারের ওই সংঘাতের সঙ্গে চলমান কৃষক আন্দোলনের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন মোর্চার নেতারা।
তবে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি তারা আরো জানিয়েছেন, আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে কিষান মোর্চা।
বিজ্ঞাপন
বুধাবারের বিবৃতিতে মোর্চার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘মঙ্গলবার যা ঘটে গেলো, সংযুক্ত কিষান মোর্চা এ ঘটনায় গভীর শোক ও নিন্দা জানাচ্ছে। চলমান আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করতে যারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে, চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কৃষকদের অনড় অবস্থানের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন কিষান মোর্চার নেতারা। ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে মোর্চার অন্যতম নেতা কাওয়াল সিং পান্নু অভিযোগ জানিয়ে বলেন, পুলিশের উস্কানির কারণেই সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটেছে।
বিজ্ঞাপন
কাওয়াল সিং বলেন, ‘ যখন আপনি (সরকার) শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করবেন, তখন এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতার দায়দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। আমাদের আন্দোলন এখানে থামবে না। গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনা আইন বাতিলের দাবিতে আমাদের চলমান আন্দোলন ও বিক্ষোভকে আরো শক্তিশালী করেছে।’
প্রজাতন্ত্র দিবসে সংযুক্ত কিষান মোর্চার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ট্রাক্টর মিছিলে শুরু থেকেই তীব্র আপত্তি ছিল ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের। ওই দিন কৃষকরা যেন কোনওভাবেই এই মিছিল করতে না পারেন- সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিল সরকার। তবে সরকারের আবেদনে সাড়া না দিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেন- বিষয়টি দিল্লি পুলিশ বিভাগের এক্তিয়ারে, আদালতের এ ব্যাপারে কিছু করার নেই।
এরপর মোর্চার নেতাদের দিল্লি পুলিশ জানিয়ে দেয়, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াচ শেষে বেলা ১২ টার দিকে ট্রাক্টর মিছিল করতে পারবেন কৃষকরা। দিল্লির মূল অংশ বাদ দিয়ে কোন কোন সড়ক ধরে মিছিল এগোবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেয় দিল্লি পুলিশ।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ বিষয়ত এক প্রতিবেদনে জানায় , দিল্লি পুলিশ রাজধানীর সিঙ্ঘু, তিকরি এবং ঘাজিপুর সীমান্ত ব্যবহার করে কৃষকদের বিক্ষোভের অনুমতি দিয়েছিল। একই সঙ্গে দিল্লির কেন্দ্রস্থলের ‘রাজপথে’ প্রজাতন্ত্র দিবসের বার্ষিক প্যারেড শেষ হওয়ার পর কৃষকরা বিক্ষোভ করতে পারবেন বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রজাতন্ত্র দিবসে পুলিশের পাশাপাশি ২০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনীও মোতায়েন করেছিল সরকার।
কিন্তু ২৬ জানুয়ারি পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সকাল ৮ টার দিকেই দিল্লির প্রাণকেন্দ্রের লাল কেল্লায় পৌঁছান হাজারও কৃষক। এরপর বেলা ১২টার অনেক আগেই ট্রাক্টরসহ এবং পায়ে হেঁটে দলে দলে কৃষকরা লাল কেল্লার দিকে রওনা হলে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়।বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে ব্যাপকভাবে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ছোঁড়ে পুলিশ,অন্যদিকে এর জবাবে কৃষকরা পুলিশ সদস্যদের ওপর ট্রাক্টর চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে দিল্লির আইটিও চত্বর, ন্যাংলোইসহ বিভিন্ন এলাকায়। এর প্রেক্ষিতে দিল্লির সীমান্ত এলাকা সিঙ্ঘু, ঘাজিপুর, তিকরি, মুকারবা চক এবং ন্যাংলই এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থগিত করার নির্দেশ দেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
তবে সবচেয়ে বড় বিতর্ক ওঠে পুলিশের নজর এড়িয়ে লালকেল্লায় ঢুকে গম্বুজের মাথায় কৃষক আন্দোলনের পতাকা টাঙিয়ে দেওয়ার ঘটনায়। শেষ খবর অনুযায়ী, ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে এক প্রতিবাদকারী নিহত হন, আহত হন ৮০ জন পুলিশ সদস্য।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের আইনসভায় তিনটি কৃষি আইনসংক্রান্ত বিল উত্থাপন করা হয়। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয় বিল তিনটি।
আইন পাশের পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কৃষক সংগঠনগুলো। আইন বাতিলের দাবিতে ২৬ নভেম্বর থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে জড়ো হতে থাকেন লাখ লাখ কৃষক। ভারতের রাজধানীর সঙ্গে অন্যান্য প্রদেশ ও প্রাদেশিক শহরগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী মহাসড়কগুলোতে প্রতিবাদী অবস্থান নেন তারা।
কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন এ কৃষি সংস্কার আইনগুলো ভারতের নিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থাকে ভেঙে দেবে এবং সরকারও ধীরে ধীরে নির্ধারিত মূল্যে গম ও ধান কেনা বন্ধ করে দেবে; যার ফলশ্রুতিতে তাদেরকে ফসল বেচতে বেসরকারি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে নামতে হবে।
ইতোমধ্যে এই আইন তিনটির বৈধতা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনের নির্দেশের পাশাপাশি এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আইনগুলোর ওপর ১৮ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ