ভারতীয় নারীর দাবি : করোনার উৎপত্তি আমার শরীরেই, চীন থেকে নয়
‘আমি শিবা। আমার শরীরের কণা থেকেই করোনার উৎপত্তি হয়েছে; চীন থেকে নয়।’ অশুভ আত্মার হাত থেকে রক্ষা করতে দুই কন্যা সন্তানকে হত্যার দায়ে গ্রেফতার হওয়ার পর ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের এক মা এই দাবি করেছেন। রোববার নিজের দুই কন্যাকে হত্যার দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন এই নারীর স্বামীও।
গণিতে স্বর্ণপদক জয়ী ওই নারীর নাম পদ্মজা ও তার স্বামী পুরুশোত্তম নাইডু রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং সরকারি একটি কলেজের অধ্যাপক। অশুভ আত্মার হাত থেকে মুক্তি দিতে দুই কন্যার হত্যাকারী এই দম্পতির বিশ্বাস ছিল- আবার তাদের জীবনেই ফিরে আসবে কন্যারা।
বিজ্ঞাপন
ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহে অন্ধ্রপ্রদেশের মদনাপাল শহরে ওই দম্পতির তিনতলা বাসায় যায় পুলিশ। এ সময় পুরুশোত্তম নাইডু পুলিশকে বলেন, ‘আমি নির্বোধ নই...আমি একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী।’ নাইডু ও তার স্ত্রী বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট কিছু বার্তা পেয়েছি যা আমাদের অবশ্যই পালন করতে হবে।’
আলেখা (২৭) এবং সাই দিব্য (২৩) এই দম্পতির দুই কন্যা। দুই কন্যাকে বলি দিতে পারলে তাদের পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে পরিবারে সুখ ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করতেন বাবা-মা।
বিজ্ঞাপন
এই বিশ্বাস থেকে গত রোববার ডাম্বল ও ত্রিশূল নিয়ে দুই কন্যার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বাবা-মা। রক্তের ধারা বয়ে যায় ঘরের মেঝেতে। দুই কন্যার একজনকে হত্যা করা হয় পূজা ঘরে; যেখানে লাল শাড়ি পরিহিত অবস্থায় ছিলেন তিনি। অন্যজনকে পাওয়া যায় আরেকটি কক্ষে নগ্ন অবস্থায়।
পুরুশোত্তম নাইডু কন্যাদের হত্যার পর তাদের রক্তের ধারা বয়ে যাওয়া দেখে সহ্য করতে পারছিলেন না। এক বন্ধুকে ফোন করে বিস্তারিত জানান তিনি। পরে সেই বন্ধু এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশকে অবগত করেন।
বেশ কয়েকটি ভিডিওতে এই নারীকে বিভ্রান্তিকর আচরণ করতে দেখা যায়। মঙ্গলবার এই নারীর করোনা পরীক্ষার জন্য যখন মেডিক্যাল কর্মীরা নমুনা নিচ্ছিলেন তখন চিৎকার করে বলেন, ‘আমি তোমাদের বলছি— ভ্যাকসিনের ব্যবহার ছাড়াই আগামী মার্চের মধ্যে করোনা চলে যাবে। করোনা চীনে নয়, আমার শরীর থেকেই উৎপত্তি হয়েছে।’
এক ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে কাঁদতে কাঁদতে পদ্মজা তার স্বামীকে বলছেন, কেন তুমি আর আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারলে না? তুমি বিশ্বাস ধরে রাখতে পারলে, আমাদের মেয়েরা জীবিত হয়ে উঠতো।
কীভাবে এ ধরনের রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড শিক্ষিত একটি পরিবারে ঘটল; সেব্যাপারে জানতে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশি এবং স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে অন্ধ্রপ্রদেশ। পদ্মজা পুলিশকে বলেন, তিনি নিজেই কন্যাদের ডাম্বেল দিয়ে আঘাত করেছেন। যদি তাদের দেহে অশুভ আত্মা না থাকতো, তাহলে তারা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত হতো। তিনি বলেন, কলিযুগ শেষ এবং সত্যযুগ শুরু হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই দুই কন্যার সর্বশেষ পোস্টগুলোতে দেখা যায়, তাদের মানসিক অবস্থাও বাবা-মায়ের মতো প্রায় একই ধরনের ছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সেঁঠিল কুমার বলেন, পুরো পরিবারটি চরম কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিল। এমনকি বাবা-মা নিজেদের উদ্দেশ্যসাধনের জন্য যা বুঝাতেন তাতে কন্যারাও রাজি হয়ে যেতো।
পুরুশোত্তম নাইডু যুক্তি দেখিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলে পদ্মজা বলেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে তুমি আর আমার স্বামী নও। আমি শিবা।’
আলেখা প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা শেষে ভোপালের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট ম্যানেজমেন্টে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছিলেন। স্থানীয় একটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে ছয়মাস কাজ করেছিলেন তিনি। সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে কয়েকমাস আগে বাড়িতে আসেন আলেখা। তার ছোট বোন ব্যবস্থাপনায় পড়াশোনা শেষে চেন্নাই ইনস্টিটিউটে সংগীতে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছিলেন।
গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির সময় তারা উভয়ই বাড়িতে ফিরে আসেন। এই পরিবারের সঙ্গে বাইরের দুনিয়ার সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। হত্যাকাণ্ডের চারদিন আগে বাড়ির আশপাশে কাউকে আসতে দেয়নি ওই দম্পতি। প্রতিবেশিরা প্রায়ই বাড়িটিতে অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড দেখতেন। যদিও পরে তাদের জানানো হয়, পূজার জন্যই সব আয়োজন।
সূত্র: এনডিটিভি।
এসএস