কোয়ারেন্টাইন শেষে উহানের অলি-গলিতে ঘুরছে ডব্লিউএইচও তদন্ত দল
নানা নাটকীয়তার পর সশরীরে করোনার উৎস খুঁজতে তদন্তের অনুমতি পেয়ে ১৪ জানুয়ারি উহানে পৌঁছায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একদল প্রতিনিধি। চৌদ্দ দিনের কোয়ারেন্টাইনের পর অবশেষে মাঠে নেমেছেন তারা।
ডব্লিউএইচও বিজ্ঞানীরা হাসপাতাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও উহানের যে সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে ভাইরাসটির বিস্তার; সেখানকার বিভিন্ন মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও তাদের সাক্ষাৎকার নেবেন।
বিজ্ঞাপন
তাদের গবেষণাটি অবশ্য চীনা কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য-প্রমাণাদির ওপর নির্ভর করছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বেইজিংয়ের আলোচনার পর উৎস সন্ধানে সম্প্রতি এসব বিশেষজ্ঞ উহান যাওয়ার অনুমতি পায়।
বিবিসি এ খবর জানিয়ে লিখেছে, গত ১৪ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল উহানে পৌঁছানোর পর তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন আজ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে কোয়ারেন্টাইনের এই ১৪ দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানীরা অবশ্য বসে ছিলেন না। ভিডিও কলে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা যখন হোটেল থেকে বের হন তখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তারা। এর আগে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা টুইট করে তাদের কোয়ারেন্টাইন শেষ হওয়া কথা জানান।
এ সময় তাদের অনেকে কোয়ারেন্টিন শেষ ও তাদের মেডিকেল সার্টিফিকেটের ছবিও টুইট করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্য নেদারল্যান্ডসের ভাইরোলোজিস্ট মারিওন কুপম্যানস লিখেছেন, ‘নতুন পর্ব, নতুন অগ্রাধিকার।’
উহানে পৌঁছানোর আগে ডব্লিউএইচও জানায়, একজন ফিরে আসায় এবং একজন ট্রানজিটে আটকে পড়ায় তাদের প্রতিনিধি দলকে চীনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বেইজিং অবশ্য পরে দাবি করে, এটা ভুল বোঝাবুঝি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। কিন্ত এরপর চীন বারবার বলে আসছে, উহানেই যে করোনার উৎপত্তি এবং এখান থেকেই এর বিস্তার ঘটিয়েছে এমনটা ভাবার কারণ নেই।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে এও দাবি করা হয় যে, চীনের বাইরে থেকেই হয়তো মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। এটা হতে স্পেন, ইতালি কিংবা যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, আমদানিকৃত হিমায়িত খাবারের মাধ্যমে চীনে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বেইজিংয়ের এমন দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
চীনের বিরুদ্ধে স্বজনদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ
করোনার উৎস তদন্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদল উহানে থাকলেও চীন সরকারের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করে সেখানে করোনায় প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনরা এ নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এএফপির জানাচ্ছে, প্রিয়জন হারানো এসব অসহায় স্বজনরা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গ্রুপ ডিলিট করে এ নিয়ে কোনও কিছু না বলার জন্য চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ চাপ প্রয়োগ করছে।
বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনার সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হওয়া উহানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার জন্য প্রিয়জন হারানো মানুষরা এক হয়ে অনলাইনে গ্রুপ খুলেছিলেন।
ডব্লিউএইচও প্রতিনিধি দলকে উহানে করোনার উৎস তদন্তের অনুমতি দেওয়া চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর যেকোনও পরিস্থিতি এড়াতে ক্ষুব্ধ স্বজনদের এমন করে চাপে রেখেছে বলেই ধারণা।
এএস